পরিবেশ চেক

অসত্য

পরিবেশ চেক

February 20, 2021, 8:51 am

Updated: February 20, 2021, 8:51 am

এই গাছের পাতা খেলে কি মৃত্যু অনিবার্য?

Author: Zahed Arman Published: February 20, 2021, 8:51 am | Updated: February 20, 2021, 8:51 am

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ‘ডিয়েফেনবাকিয়া’ নামক একটি পাতাবাহার গাছের যে কোনো অংশ খাওয়ার এক মিনিটের মধ্যে একটি শিশুর মৃত্যু হতে পারে। আর প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু হতে পারে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে।” বিডি ফ্যাক্টচেক-এর অনুসন্ধানে এমন দাবির সত্যতা মিলেনি।

এ সম্পর্কিত বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর শিরোনাম: ঘরে রাখা মৃত্যুফাঁদ যে গাছ!

ডেইলি বাংলাদেশ-এর শিরোনাম: যে গাছ বাড়িতে থাকলে মিনিটেই হতে পারে মৃত্যু!

এনটিভি অনলাইনের শিরোনাম: বিষাক্ত এই গাছগুলো হয়তো আপনার ঘরেই আছে

আমাদের সময় ডটকম-এর শিরোনাম: পাতাবাহার ‘ডাম্ব’ হতে পারে মৃত্যুর কারণ!

কর্পোরেট সংবাদ-এর শিরোনাম: যে গাছ বাড়িতে থাকলে মৃত্যুও হতে পারে!

এছাড়া এটি সম্প্রতি Dr Muhammad Ibrahim নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে। 

উপরের সবগুলো সংবাদ শিরোনামের ভিতরে মোটামুটি একই আধেয়। সবগুলো সংবাদেই যা বলা হয়েছে তার সারমর্ম হচ্ছে, “বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গাছের যে কোনও অংশ খাওয়ার বা গলায় যাওয়ার এক মিনিটের মধ্যে একটি শিশুর মৃত্যু হতে পারে। আর প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু হতে পারে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই।”

ওইসব সংবাদে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের বরাতে আরও বলা হচ্ছে, “এই গাছ হাত দিয়ে ধরলে এবং ওই হাত যদি চোখে যায়, সেক্ষেত্রে অন্ধত্বের আশঙ্কাও থাকে।”

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ২০১৭ সাল থেকেই একই সংবাদ ঘুরেফিরে আসছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদটি ছাপা হয়েছে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮। ডেইলি বাংলাদেশ-এ ছাপা হয়েছে ৯ মার্চ ২০২০। এনটিভি অনলাইনে ছাপা হয়েছে ২ জানুয়ারি ২০১৭। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরেই সংবাদটি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমেও এই ভুয়া সংবাদটি ছাপা হচ্ছে। 

এছাড়া উপরের প্রতিবেদনগুলোতে নির্দিষ্ট করে কোনো উৎসের কথা বলা হয়নি। শুধু উদ্ভিদবিজ্ঞানী কিংবা উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্র ফার্মাকোলজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পিটসবার্গ পয়জন সেন্টারের প্রাক্তন পরিচালক অ্যাড ক্রেনজেলেক দীর্ঘদিন ধরে ডিয়েফেনবাকিয়া’র বিষক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি স্নোপসকে বলেন, আমি ডিয়েফেনবাকিয়া কিংবা আরুম পরিবারের কোনো গাছকে প্রণঘাতি হতে দেখিনি। আমি আমার ক্যারিয়ারের কয়েক হাজার কেস পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। 

তিনি বলেন, ডিয়েফেনবাকিয়া পাতাবাহারের পাতা শরীরের কোথাও লাগলে জ্বলার মতো অনুভূতি হয়। কমপক্ষে প্রথম শতাব্দীর পর থেকে পাতাবাহারের এই বৈশিষ্ট্যটি প্রায় সবার জানা। জ্যামাইকান দাস ব্যবসায়ীরা এই গাছের রস দাসদের জিহ্বায় ঘষে তাদের শাস্তি দিতো। ফলে তাদের মুখমন্ডল ফুলে যেতো এবং জ্বালার মতো অনুভূতি হতো। 

ক্রেনজেলেক আরও বলেন, এই গাছের পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে যা ত্বক বা মুখের সংস্পর্শে এলে তীব্র ব্যথা এবং ফোলাভাব ঘটায়। কিন্তু কখনও মৃত্যুর কারণ হয়না। এছাড়া, এটা চোখের সংস্পর্শে এলেও চোখে জ্বলার মতো অনুভূতি হতে পারে। কিন্তু তা কখনও চোখের স্থায়ী করে না। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *