ফিচারড নিউজ

আংশিক সত্য

ফিচারড নিউজ

December 7, 2020, 9:55 pm

Updated: December 7, 2020, 9:55 pm

এই নগ্ন নারীমূর্তি দুটি কি বাংলাদেশে অবস্থিত?

Author: BD FactCheck Published: December 7, 2020, 9:55 pm | Updated: December 7, 2020, 9:55 pm

“মহিলা টিচার্স ট্রেইনিং এর গেইটের সামনে এই ভাস্কর্য। একজন বাবা কিংবা ভাই তার মেয়ে বা বোনকে নিয়ে যখন ঐখানে যায়,তখন লজ্জায় তাদের মাথা উপরে উঠাতে পারে না।। এটা কোন সভ্যজাতি হতে পারে না।
ভাস্কর্য নামে আপনারা কি উন্মোচন করতে চান সেটা জনগণ খুব ভালো ভাবে বুঝে।”

উপরের এই ক্যাপশনযোগে একটি নারীমূর্তির ছবি (এই পোস্টের ডানের ছবিটি, যেটিতে শুধু শরীরের পেছনের নগ্ন অংশ দেখা যাচ্ছে) সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।

তেমন পোস্ট দেখুন নিচের এই লিংকে:

BD FactCheck এর যাচাইয়ে দেখা যাচ্ছে, এই ছবিটি বাংলাদেশের কোনো স্থানের নয়। এটি স্পেনের বার্সেলোনা শহরে স্থাপিত একটি মূর্তি। মূল ছবি আছে এখানে, এখানে

স্পেনে অবস্থিত মুর্তিটির ছবি

এই পোস্টে যুক্ত স্ক্রিনশটে বাম পাশে যে নারীমূর্তিটির শরীরের সামনের এবং পেছনের নগ্ন ছবি দেখা যাচ্ছে সেটিকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে অবস্থিত মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গেটে স্থাপিত মূর্তি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

এটা সত্য যে, নগ্ন মূর্তিটি ময়মনসিংহে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গেটে অবস্থিত।

কিন্তু ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন পোস্টে মূর্তিটি সম্পর্কে আরও কিছু দাবি করা হয়েছে সেগুলো বিভ্রান্তিকর।

যেমন একটি পোস্টে ছবিটি দিয়ে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে–

//
“মহিলা কলেজের সামনে কেন এই অশ্লীল ভাস্কর্য?ময়মনসিংহ মহিলা কলেজর সামনে নগ্ন মূর্তি স্থাপন
কোন আদেশে কাদের ইশারায় নগ্ন মহিলার মুর্তী ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে স্থাপন করা হল। যেখানে মেয়রা পড়াশোনা করে সেখানে নগ্ন মূর্তি স্থাপন করে কি শিক্ষার বিকাশ ঘটাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে! নগ্ন মূর্তি স্থাপন করে পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থা সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনছে।
কমল মতি শিশুরা এসব নগ্ন মুর্তি দেখে উত্তেজিত হবে। দেশে ইভটিচিং,গনধর্ষণ এর মতো ঘটনার জন্ম দিবে এই নগ্নমুর্তি। ৯৫ শতাংশ মুসলিম দেশে এমন নগ্ন মূর্তি মেনে নেওয়া যায় না। ইসলাম ধর্মে মূর্তি স্থাপন করার অনুমতি নাই। তবে শুধু যারা ধুর্মীয় ভাবে মুর্তি বানাবে যেমন বিভিন্ন দেব-দেবীর সেটা আলাদা কথা। কারন ইসলাম ধর্মে বলা আছে যার যার ধর্ম তার তার কাছে। কারো ধর্মকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। তাই ধর্মীয় অনুভুতিকে আঘাত করে এমন কিছু না করাই উত্তম। এই নগ্ন মূর্তি বাংলার সংস্কৃতির আদব, কায়দা, ভদ্রতা, শালিনতা নাকি? এটি কি আবহমান বাংলার সংস্কৃতি? এটি কি নারীর অধিকার? অনতিবিলম্বে মহিলার নগ্ন মূর্তি সরিয়ে ফেলতে হবে। মহিলারা মায়ের জাতি। সেই মায়ের জাতিকে নগ্নভাবে উপস্থাপন করে কি বোঝাতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ?”
//

দেখুন এখানে

এসব পোস্ট পড়ে ধারণা হতে পারে যে, “ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজর সামনে নগ্ন মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে”। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়।

বাংলাদেশ জাতীয় সরকারি তথ্য বাতায়ন অনুযায়ী মূল ঘটনা হলো, “ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে নয় একর জায়গায় একটি দ্বিতল ভবন তৈরি করেন মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত। তাঁর দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে ভবনের নাম রাখা হয় শশী লজ। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পে ভবনটি বিধ্বস্ত হয়। ১৯০৫ সালে একই জায়গায় পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আবার ভবন তৈরি করেন।”

সরকারি তথ্য বাতায়নের লিংক:

বিলাসবহুল এই ভবনে আরও অনেক কিছুর সাথে “গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরত মর্মর মূর্তি”ও স্থাপন করেছিলেন এটির মালিক। পরে ১৯৫২ সালে এ বাড়িতে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িটির মূল অংশ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় ও দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জাদুঘর স্থাপনের জন্য শশী লজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। (সূত্র: প্রথম আলো)। দেখুন

অর্থাৎ, ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজর সামনে নগ্ন মূর্তিটি স্থাপন করা হয়নি। বরং মূর্তিসহ শতবর্ষ আগে স্থাপিত হিন্দু ব্যক্তির (তৎকালীন স্থানীয় মহারাজা) মালিকানাধীন ভবনে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ স্থানান্তরিত করা হয়েছিলো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *