
করোনাভাইরাস কি সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি কোন ষড়যন্ত্র?
Author: BD FactCheck Published: August 30, 2020, 11:12 pm | Updated: August 30, 2020, 11:12 pm
অনলাইনে শেয়ার হওয়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস মহামারি একটা গুজব এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। দাবীটি অসত্য।
শেয়ার হওয়া পোস্টটি দেখুন এখানে ।
ভিডিওটির শুরুর দৃশ্যে দেখা যায়, বিলিওনিয়ার বিল গেটস সতর্ক করে বলছেন, “পরবর্তী মহামারীর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
ভিডিও ক্লিপটির ভাষ্যকার তারপর কয়েকটি পয়েন্টের মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেন যে, এই মহামারিটা আসলে পরিকল্পিত, এবং দাবি করেন যে, এটি একটি গুজব যা মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য।
দাবী-১ঃ কোভিড-১৯ এর জন্য যে ভাইরাস দায়ী সেটিকে এখনো আলাদা বা চিহ্নিত করা যায়নি।
ভাষ্যকার এই অংশে বলছেন, “তারা (যারা কোভিড নিয়ে কাজ করেছেন) এই ভাইরাসকে আলাদা করতে পারেনি অথবা আসলেই এই ভাইরাস আছে কিনা তা চিহ্নিত করতে পারেনি। আসলে পুরো ব্যাপারটিই ভাওতাবাজি।”
দাবিটি সত্য নয়। সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস-২ (SARS-COV-2) নামক ভাইরাসই কোভিড-১৯ রোগের জন্যে দায়ী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চাইনিজ কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারীতেই ভাইরাসটি সনাক্ত করে। দেখুন এখানে।
দাবী-২ঃ কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা হলো মোটাদাগে আরএনএ ভাইরাস ও জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালের পরীক্ষা
এক্ষেত্রে ভাষ্যকারের দাবী হলো “অবশ্যই, তারা যত মানুষ পরীক্ষা করবে, তত বেশি কোভিড পজেটিভ পাবে কারন তারা মূলত আরএনএ ভাইরাস এবং জেনেটিক ম্যাটারিয়াল পরীক্ষা করে।” দেখুন এখানে।
কোভিড-১৯ পরীক্ষা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে সনাক্ত না করে শুধু আরএনএ ভাইরাসকে চিহ্নিত করে এই দাবীটিও সত্য নয়।
আরএনএ ভাইরাস হলো এমন ভাইরাস যার জেনেটিক ম্যাটারিয়াল হলো আরএনএ (দেখুন)। আরএনএ ভাইরাস দ্বারা ঘটিত রোগগুলো হলো কোভিড-১৯, (দেখুন) সার্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ইবোলা ভাইরাস। দেখুন এখানে।
সাধারনভাবে সার্স কোভ-২ চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত পলিমেরাস চেইন রিয়াকশন (পিসিআর) টেস্ট মূলত সোয়াব স্যাম্পলের মধ্যে আরএনএর উপস্থিতি সনাক্ত করার মাধ্যমে কাজ করে দেখুন ।
প্রত্যেকটা ভাইরাসের আলাদা আলাদা গঠনের আরএনএ ম্যাটারিয়াল থাকে, এবং করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্যে সার্স কোভ-২ এর আরএনএ ম্যাটারিয়াল বিশেষভাবে পরীক্ষা করা হয়।
দাবী-৩- সকল মৃত্যুকেই কোভিড-১৯ বলে চালানো হচ্ছে
‘করোনা হোক বা না হোক সকল মৃত্যুকেই কোভিডে মৃত্যু বলে চালানো হচ্ছে। যখনি টেস্ট করোনোর জন্যে জেনেটিক ম্যাটারিয়াল আপনার শরীরে নিবেন এটা আপনাকে কোভিড-১৯ পজেটিভ দেখাবে।” দেখুন এখানে।
“যুক্তরাজ্যে Office of National Statistics (ONS) কর্তৃক কোভিড-১৯ এ মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত তালিকা তে “কোভিড-১৯’’ এ সংঘটিত মৃত্যু অন্তর্ভুক্ত আছে।
এই তালিকায় এমন মৃত্যুরও উল্লেখ আছে যার মৃত্যুসনদের কোথাও কোভিড-১৯ আছে যদিও এটা মূল কারন নাও হতে পারে।” দেখুন
যাইহোক, ONS বলছে “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (৪৬,৭৩৬ মৃত্যু, ৯২.৮%) ক্ষেত্রে যেখানে কোভিড-১৯ কে মৃত্যু সনদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এটাই মৃত্যুর মূল কারন ছিল বলে দেখা গেছে।”
এটা বলা ভুল হবে যে সকল মৃত্যুকেই কোভিড মৃত্যু হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই মহামারির ফলে কি পরিমাণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা বোঝার একটা উপায় হল কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যাশিত মৃত্যুর চেয়ে বাড়তি মৃত্যুর ঘটনা কেমন ঘটছে সেটা বের করা।
ONS এর একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলেসে এই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা অতিরিক্ত; যা আসলে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যাই নির্দেশ করে ( ২ নং পরিসখ্যানে) । দেখুন
জুন মাসে ONS এর রিপোর্টে বলা হয় সমগ্র ইউকে জুড়ে এবছরের মহামারীর সময় গত পাচ বছরের গড় তুলনায় ৬৪,৫০০ অতিরিক্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যদিও এই সখ্যা আরো বাড়ছে এখন। দেখুন
রায়:
অসত্য। করোনা ভাইরাস মহামারী কোনো গুজব নয়; এটা একটি বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব যার জন্য সার্স-কোভ-২ ভাইরাস দায়ী।
প্রতিবেদনটি রয়টার্সের ফ্যাক্টচেকার Axel Schmidt এর কোভিড-১৯ বিষয়ক ফ্যাক্টচেক থেকে অনূদিত। মূল প্রতিবেদনটি পড়ুন।