
করোনা নিয়ে ভুয়া তথ্য সম্বলিত ভিডিওকে WHO এর বক্তব্য বলে প্রচার
Author: BD FactCheck Published: October 30, 2020, 12:54 am | Updated: October 31, 2020, 1:02 am
কোভিড-১৯ একটি সাধারণ ফ্লু ভাইরাস এবং বিশ্বে এখন আর কোন মহামারী নেই; কিছু চিকিৎসকদের এমন দাবি সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে।
৪ মিনিট এর ভিডিওটিতে ওই চিকিৎসকেরা সাক্ষ্য-প্রমাণহীন কিছু দাবি করেছেন যা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা পোস্ট করে বলছেন যে, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিকিৎসকেরা নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে সম্পূর্ণ ইউটার্ন নিয়েছেন”।
কিন্তু দেখা গেছে, ওই ভিডিওতে কথা বলা চিকিৎসকেরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কেউ নন, বরং তারা নিজেদের ওয়ার্ল্ড ডক্টরস অ্যালায়েন্স নামে একটি সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেন। এবং ভিডিওটিতে তাদের করা দাবিগুলোও অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।

ভিডিওর দাবিসমূহ:
উল্লেখিত ভিডিওটিতে কোভিড-১৯-কে সাধারণ ফ্লু বলা থেকে শুরু করে করোনা ভ্যাকসিন বর্জন করা পর্যন্ত বিভিন্ন দাবি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
চিকিৎসক দলটির পক্ষে ড. এলকে ডি ক্লার্ক নামের একজন বলেন, “এখন আমরা আর কোন মহামারি মোকাবিলা করছি না।” তিনি আরো দাবি করেন, করোনাভাইরাস একটি সাধারণ ফ্লু ভাইরাস এবং তারা আরো চিকিৎসক ও ৮৭০০০ নার্সকে সঙ্গে নিয়ে করোনা ভ্যাকসিন চান না মর্মে একটি আইনি পদক্ষেপ নিবেন। ডি ক্লার্ক জানতে চান যেখানে মহামারীই নেই সেখানে শিশুদের কেন স্কুলে মাস্ক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে।
চিকিৎসক দলটি মনে করে, পিসিআর মেশিনে ভুল ফলাফল আসার কারণে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ডি ক্লার্ক বলেন, ৮৯ থেকে ৯৪ শতাংশ পিসিআর মেশিনের ফলাফলই ভুল।
অন্য এক চিকিৎসক দাবি করেন, আয়ারল্যান্ডে গত এপ্রিল থেকে করোনাভাইরাসে মাত্র ৯৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর আয়ারল্যান্ডে ৩০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন যাদের মধ্যে ১০ হাজার মারা যান হৃদরোগজনিত কারণে এবং ১০ হাজার ক্যান্সারে।
একইভাবে অন্য চিকিৎসকেরা দাবি করেন, লকডাউন একটি বৃহৎ বিপর্য়য় ছিল এবং এটা কোন কাজে আসেনি।
ফ্যাক্ট চেক:
ভিডিওটিতে প্রথম বক্তা তার নাম এলকে ডি ক্লার্ক বলে দাবি করেন। এই নাম দিয়ে গুগল সার্চ দিলে দেখা যায় তিনি ওয়ার্ল্ড ডক্টরস অ্যালায়ন্স নামে চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের সদস্য। সংগঠনটির ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায়, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওটির অন্যান্য প্যানেলিস্টরাও একই সংগঠনের সদস্য।
কোভিড-১৯ কি অতিমারি?
ভিডিওর প্রথমেই ড. ক্লার্ক কোভিড-১৯ মহামারিকে একটি গুজব বলে অভিহিত করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন রোগ যখন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, কোনো নির্দিষ্ট দেশের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিস্তৃত হয় এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠিকে আক্রান্ত করে তখন সেটাকে অতিমারি বা বৈশ্বিক মহামারী বলা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরস আধানোম গত মার্চের ১১ তারিখে যখন কোভিড-১৯ কে অতিমারী হিসেবে আখ্যা দেন তখন বিশ্বের ১১৪টি দেশে ১১৮০০০ মানুষ আক্রান্ত ছিলেন এবং প্রায় ৪০০০ মারা গিয়েছিলেন।
আর এই প্রতিবেদন লেখার সময় সারা বিশ্বে ৪৩ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১১,৫৩,৮৫৭ জন মারা গেছেন।
তাছাড়া আয়ারল্যান্ডে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা নিয়েও ভিডিওটিতে অসত্য তথ্য দেয়া হয়েছে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে আয়ারল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ৯৮ জন নন, বরং ১৮০০ এর উপরে মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।
নতুন করোনাভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা:
ড. ক্লার্কের আরেকটি দাবি হলো করোনাভাইরাস সাধারণ ফ্লু ভাইরাস থেকে পৃথক নয় এবং এজন্য আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই দাবীটিও অসত্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের চেয়ে সাধিরণ ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণের গতি বেশি হলেও আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আরেকজন আক্রান্ত হওয়ার হারে করোনাভাইরাস অনেক এগিয়ে।
তাছাড়া সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা থাকলেও বর্তমানে করোনাভাইরাসের কোন টিকা নেই। একইসাথে ফ্লু জনিত উপসর্গের পাশাপাশি করোনাভাইরাসে রয়েছে ফুসফুস, হৃদপিন্ড, পা ও মস্তিষ্কের ধমনীতে রক্ত জমাট বাধার মতো উপসর্গও।
ভুল পিসিআর ফলাফল প্রসঙ্গ:
ড. ক্লার্কের আরেকটি দাবি হলো ৮৯ থেকে ৯৪ শতাংশ পিসিআর রিপোর্ট ভুল আসে এবং চিকিৎসকেরা বর্তমানে এটি ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই তথ্যটিও বিভ্রান্তিকর।
বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকেরা পিসিআর পরীক্ষার খুটিনাটি কাজ করেছেন। দ্য হিন্দুর এই প্রতিবেদন অনুযায়ী পিসিআর পরীক্ষা একইসাথে খুব কার্যকর; কারণ এতে শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি নিখুতভাবে ধরা পড়ে, আবার এটি ত্রুটিপূর্ণও কারণ অনেক সময় ভুল পজিটিভ ও নেগেটিভ রিপোর্ট আসে।
মাস্ক ও ভ্যাকসিন প্রসঙ্গ:
ভিডিওটিতে অপর একটি দাবি করা হয়েছে যে, মাস্ক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করে না। দ্য কুইন্টসহ বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে মাস্ক সংক্রান্ত এই অপপ্রচার খণ্ড করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
একইভাবে করোনা ভ্যাকসিন নিয়েও অপপ্রচার বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অব্যাহত আছে। গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় ফেসবুক এরকম অপপ্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।