ফিচারড নিউজ

ফিচারড নিউজ

November 1, 2020, 12:50 pm

Updated: November 7, 2020, 11:34 pm

কোভিড ‘ইনফোডেমিক’: ভুল তথ্যে ঝুঁকি কতটা মারাত্মক হতে পারে?

Author: BD FactCheck Published: November 1, 2020, 12:50 pm | Updated: November 7, 2020, 11:34 pm

গত ফেব্রুয়ারীতে প্রথমে উহান এবং তারপর থেকে সারা দুনিয়া করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে আরেকটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি আমরা। সেটা হল- করোনা কেন্দ্রিক ভুয়া তথ্য এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিস্তার।

যদিও এই করোনার ভয়াবহতায় সবাই বিহবল, কিন্তু কেউ কেউ মনে করছেন, এই করোনার পিছনে অন্য কোন ঘটনা আছে। 

বাস্তবতা অস্বীকারকারী এসব লোকজন কিছুটা আতংকিত হয়ে সকল বিপর্যয়ের জন্যে করোনাকে দায়ী করছে। 

ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট থমাস মালিয়ারউডাকিস মনে করেন, “সাধারণত এসব ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে তারাই বিশ্বাস করে যারা সহজে সবকিছু মেনে নিতে পারেনা এবং দ্রুতই ভীত হয়ে পড়ে। এছাড়াও এসব ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব নানাপক্ষের সুবিধার্থেও ছড়ানো হয়” ।  

তিনি আরো বলেন, “এ ধরণের লোকজন সমাজের জন্যে ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, বিশেষ করে এই মহামারীর সময়ে। কারণ এতে তারা বিশেষজ্ঞ-মতগুলো মেনে চলতে চায় না। ফলে এরা শুধু নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে তাই নয়, তাদের আশেপাশে লোকদেরও বিপদে ফেলতে পারে।” 

যেমন কিছু লোক এই করোনা মহামারীর জন্যে বিল গেটসকে দায়ী করছে। বলছেন, বিল গেটস করোনার সুযোগে ভ্যাক্সিনের নামে মানুষের শরীরে মাইক্রোচীপ প্রবেশ করাবে। এছাড়া কেউ কেউ আবার ৫জি নেটওয়ার্ককে করোনা সংক্রমণের জন্যে দায়ী করছে। কিংবা কারো দাবি, চীনের জীবানু-অস্ত্রের কারণেই এই রোগটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। 

যে কারণেই হোক, এই ধরণের গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সবসময় তা যাচাই করার সুযোগও হচ্ছে না।  

এসব গুজব-তত্ত্বও একটি অন্যতম কারণ যার ফলে লোকজন করোনা-সম্পর্কিত নিয়মনীতিগুলো মানছেন না। 

২০০৩ সালে ডেভিড জে রথকফ নামক একজন রাজনীতিবিজ্ঞানী সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের একটি লেখায়, গুজবকে ‘ইনফোডেমিক’ বলে চিহ্নিত করেন। 

‘ইনফোডেমিক’ কে চিহ্নিত করতে যেয়ে রথকফ বলেন, “মূলত আংশিক সত্যের সাথে ভয়, নিজস্ব পর্যবেক্ষণ এবং গুজব মিলিয়ে একটি  দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে দেয়া হয় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে”। 

অক্সফোর্ড ডিকশনারি মতে, ইনফরমেশন(তথ্য) এবং এপিডেমিক (মহামারী) দুটি শব্দকে একসাথে মিলিয়ে ‘ইনফোডেমিক’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মূলত ব্যাপক ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি এবং তা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেলে উক্ত পরিস্থিতিকে ‘ইনফোডেমিক’ বলে চিহ্নিত করা হয়। 

এফি দিমা নামে একজন নারী বলেন, “যারা মাস্ক পরতে অস্বীকার করে তারা মূলত সবকিছুকেই অস্বীকার করে, কিন্তু কোন বাস্তব সমাধান দিতে পারেনা”।  

ফলে এই মহামারীতে তথ্যের অবাধ প্রবাহের কারণে মাস্ক ও ভ্যাক্সিন-বিরোধী কিছু ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে বেশকিছু লোক বিশ্বাস করতে শুরু করছে।  

“ইতিহাসে সবসময়ই দেখা যায়, ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব এবং মিথের প্রতি মানুষের সবসময়ই একটি আগ্রহ থাকে” বলে মনে করেন এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক ইউলি ফোকা-কাভেলিরাকি। তবে তিনি এও মনে করেন, “করোনা সংক্রান্ত গুজবগুলো অবশ্য কিছুটা আলাদা”। 

“ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে খুব জলদি এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে যা মানুষের জন্যে ক্ষতিকর। এবং এসব গুজবে বিশ্বাসের দরুণ সাধারণ স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত গাইডলাইনগুলো তখন তারা মানতে আগ্রহী থাকেন না”।  

অবশ্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই ভ্যাক্সিন ও মাস্ক-বিরোধী এসব গুজব নিয়ে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই সচেতন করে যাচ্ছেন। 

সংক্রমণ-রোগ বিশেষজ্ঞ নিকোস সাইপ্সাস এক স্বাক্ষাতকারে বলেন, এই মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ভুয়া তথ্যকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া তিনি সবাইকে দায়িত্বশীল জায়গা থেকে সত্য তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। 

কিন্তু আমরা সেপ্টেম্বরের শুরুতে দেখেছি, গ্রিসের একাধিক শহরে মাস্কের বিরুদ্ধে এমনকি করোনার অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলেছে। তারা স্লোগান দিয়েছে যে, “আমাদের মুখ বন্ধ করা যাবেনা। আমরা মাস্ক পরবো না”। এছাড়া দাবি করা হয় মাস্ক পরলে কার্বন ডাই অক্সাইডের বিষাক্ত ক্রিয়া হতে পারে অথবা অক্সিজেনের স্বল্পতা হতে পারে। 

অথচ সারা দুনিয়ায় ১মিলিয়নের বেশি লোক করোনায় মারা গেছেন এবং ৪৩ মিলিয়নের বেশি ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা। 

নিজের পুরো নাম জানাতে অনিচ্ছুক জনৈক নাতাশা(৩৮) জানান, করোনা-বিরোধী নানা সন্দেহের কারণ মূলত ঔষধ-ব্যবসা। কারণ এরা জোর করে আমাদের ভ্যাক্সিন নিতে বাধ্য করবে, কিন্তু আমরা জানিনা এর ফলাফল কী’।  

উল্লেখ্য যে, নাতাশা এথেন্সে মাস্ক-ভ্যাক্সিন বিরোধী ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছিলেন। 

এদিকে ক্রিস্টোস নামক এক ব্যক্তি আনাদলু এজেন্সিকে জানান, তিনিও তার সন্তানদের দিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং তাদের মাস্ক পরাতে ভয় পান। কারণ এতে অতিরিক্ত কার্ব-ডাই-অক্সাইডের ফলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনার এই মহামারীতে মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব এবং পরবর্তীতে ভ্যাক্সিন ব্যতীত এটিকে নিয়ন্ত্রন করা যাবেনা। 

এছাড়াও শিশু বিশেষজ্ঞ এনা পারডালি মনে করেন, যদি মাস্ক পরতে অসুবিধা না হয়, তাহলে শিশুদেরকেও মাস্ক পরতে হবে। 

এক্ষেত্রে বিজ্ঞ ব্যক্তিগন মনে করেন, সময়ের সাথে যত মহামারী আসবে, তার সাথে গুজবও তার পথ খুঁজে জন্ম নিবে, ছড়াবে। এছাড়া ভয়, আস্থাহীনতার সংকট এবং হারিয়ে ফেলার আশংকা থেকেও গুজব জন্মাবে। 

Anadolu Agency অবলম্বনে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *