
কোভিড ভ্যাকসিনের যথাযথ বন্টনে প্রযুক্তিগত যত চ্যালেঞ্জ
Author: BD FactCheck Published: December 22, 2020, 10:00 pm | Updated: December 23, 2020, 12:19 am
আমেরিকায় করোনার ভ্যাকসিনের বন্টন শুরু হওয়ার পথেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিরাট প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের। এর একটি দিক হল, কিভাবে এই ভ্যাকসিনের যথাযথ বিতরণ করা হবে। আরেকটি হল, ভ্যাকসিন-গ্রহীতা কারা হবে সেটি কিভাবে নির্ধারণ করা হবে। যদিও স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের গাইডলাইন বলছে, অন্তত ৬০-৭০ ভাগ লোককে ভ্যাকসিনের আওতাভুক্ত করা গেলে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জন করা যাবে।
তবে কঠিন সত্য কথা এই যে, এ ধরণের বিতরনের জন্যে যে তথ্যের কাঠামো দরকার তা আমেরিকায় এখনো যথেষ্ট নেই। এই লেখায় আমরা সেই চ্যালেঞ্জগুলো দেখানোর এবং সেগুলোর সমাধান নিয়েই কথা বলব।
১. নির্দিষ্ট একটি উপায়ে নাগরিকের তথ্য আদান-প্রদান করা
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য এর বেলায় প্রত্যেক ভ্যাকসিন-গ্রহীতার টিকা প্রদানের বিস্তারিত রেকর্ড রাখাটা বেশ কঠিনই বটে। কেননা, অঙ্গরাজ্য ভেদে আমেরিকায় প্রাইভেসির আইনও আলাদা। এছাড়াও অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করার ব্যাপারেও কিছু বাধা আছে। মূলত সমগ্র মার্কিনদেশের নাগরিকদের জন্যে ‘সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার’ এর বাইরে একটি সাধারন আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার না থাকার কারণেও কিছু জটিলতা দৃশ্যমান হচ্ছে। সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বারটি যেকোনো সময় চুরি করা যায় এবং যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে সব স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই নাম্বারটি দিয়ে কাজ করতে সক্ষম নয়। ফলে যথাযথ তথ্যের অভাবে ভ্যাকসিন প্রদান ব্যাহত হতে পারবে, জালিয়াতিও হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হল নাগরিকদের চিহ্নিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বিত তথ্য-ব্যবস্থাপনাকে আরো বেশি সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন।
২. সরকারি ডেটাবেইজ-সিস্টেমে ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা
ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক অবস্থায় নজর রাখতে আমেরিকার একটি বিচ্ছিন্ন ডেটাবেইজ-সিস্টেম আছে। এই সরকারি সিস্টেমের অধীনে ক্লিনিকগুলোর সাথে ব্যক্তির মেডিকেল রেকর্ডসহ অন্যান্য তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। ভ্যাকসিনের যথাযথ বিতরণেও এটিকে ব্যবহার করা হয়। ২০০৯ সালের এইচ1এন1 মহামারিতে যেমন ব্যবহার করা হয়েছিল।
কিন্তু এই সিস্টেমের অধীনে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ভাগ মার্কিনীকে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ এটি দিয়ে ভ্যাকসিন বিতরণের সকল কাজ করা সম্ভব হবেনা। এছাড়াও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় কাজ করে, তাদের মাত্র ৩১ ভাগ স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৩৮ ভাগ ফার্মাসিস্ট তাদের কাজ উক্ত সিস্টেমে নিবন্ধন করে থাকে।
তাই আমরা মনে করি, মার্কিন প্রশাসনের উচিত সকল অঙ্গরাজ্যের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের চ্যানেল তৈরি করে সেগুলোকে মজবুত করা। যদিও সেখানে বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যের এই ধরণের আদান-প্রদানের অনুমতি আছে, বাট তার চর্চাটা অতটা নেই। এর ফলে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু স্বাভাবিক উন্নতি আসবে।
৩. ডিজিটাল ‘ইমিউন পাসপোর্ট’ কিংবা সার্টিফিকেটকে সর্বত্র ব্যবহার উপযোগী করা
যারা ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ ডোজ শেষ করেছেন তাদের চিহ্নিত করতে বিশেষ ধরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন বেশ কিছু দেশে যারা পোলিও এবং জ্বরের ভ্যাকসিন-প্রাপ্তদের জন্যে সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা আছে। সেরকম একটি ব্যবস্থা করোনায় করা সম্ভব। তবে সেটি হতে হবে ডিজিটাল কার্ড। যা দিয়ে সহজে বিদেশেও ভ্রমন করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও ‘ইমিউনিটি পাসপোর্ট’ ও তৈরি করা যায় যাতে কোনো ব্যক্তির ইমিউনিটির লেভেলসহ চিহ্নিত করা যায়। তবে সেটিকে অবশ্যই দেশে এবং বহির্বিশ্বে সমান তালে ব্যবহার করার যোগ্য হতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকে যথেষ্ট ভাল প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে যাতে উক্ত পাসপোর্টের অতিরিক্ত তথ্য বেহাত না হয়ে যায়।
এছাড়াও উক্ত ‘ইমিউনিটি পাসপোর্ট’ এর ব্যাপারে এয়ারপোর্টের বাইরেও নানা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা যাতে পারে, যেমন হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং সফররত দেশের সরকারকে। এছাড়া কিছু এয়ারপোর্টে ‘হেলথ পাস’ এর ব্যাপারে বিশেষ এপ ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। এতে স্বাভাবিক চলাফেরাকে আরো স্বাভাবিক করবে। এতে যারা সহজেই সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, তাদের চলাচলে কিছু সীমাবদ্ধতা আনা সম্ভব।
৪. নাগরিকের গোপনীয়তা এবং তথ্য-পাচার বানিজ্যে বিশেষ নজর প্রদান
জাতীয় ভ্যাকসিন পরিকল্পনায় আমাদের নাগরিকের গোপনীয়তা বিষয়টি আমলে নিতে হবে। যাতে তথ্য চুরির মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে নাগরিককে যথাযথভাবে আশ্বস্ত করতে হবে যে তার কোন তথ্য বেহাত হবার সুযোগ নেই।
কেননা, এটি ইতিমধ্যে নানা জায়গায় সমস্যা তৈরি করছে এবং করোনার ভ্যাকসিনের বন্টনে এটা একটি সমস্যা আকারে হাজির হতে পারে। এছাড়া এমনও হতে পারে, লোকজন ভুয়া তথ্য দিয়ে আগে আগে ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
কেউ কেউ ভুয়া সার্টিফিকেট বানাতে পারে যা দিয়ে সে দাবি করতে পারে তার ভ্যাকসিন নেয়া হয়েছে। ফলে সেক্ষেত্রে প্রশাসনকে একাধিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করে কাজটি করতে হবে। বিশেষত, ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে যে অগ্রাধিকার-তালিকা করা হয়েছে সেটি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে তথ্যভান্ডার যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ অবলম্বনে