
কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠার হার ৯৯.৯৭ শতাংশ নয়
Author: BD FactCheck Published: November 27, 2020, 11:26 pm | Updated: November 28, 2020, 3:12 pm
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু পোস্টে ফাইজার কোম্পানীর তৈরী কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনের কার্যকরিতা এবং সুস্থতার হার নিয়ে বিভিন্ন দাবী করা হচ্ছে।
তেমন পোস্টে লেখা আছে–
“ফাইজারে ফাইজার ভ্যাকসিনের সুস্থতার হার ৯০%,
যেখানে ভাইরাসটি থেকে সুস্থতার হার ৯৯.৯৭%”
ফেসবুক পোস্টটিগুলিতে কোভিড-১৯ এর দ্বারা ঘটে যাওয়া মৃত্যুকে অযাচিত ভাবে কমিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এবং কোভিড যারা ভুগছেন তাদের প্রকৃত অবস্থাও সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি ৷ আরেকটি ব্যাপার হলো ফাইজার ভ্যাকসিনের কার্যকরীতার তুলনাটি এখানে বিভ্রান্তিকর৷ কি পরিমান মানষ মারা গেছেন না দেখিয়ে দেখানো হয়েছে কত মানুষ সংক্রমিত হয়েছে
কোভিড-১৯ এর মৃত্যুর হার কেমন?
যেভাবে পোস্টে দাবী করা হয়েছে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৯৯.৯৪% থেকে ৯৯.৯৭% মানুষ সুস্থ হয়েছে তা সত্যি নয়৷
এটা আসলে এমন একটি অনুমানের মাধ্যমে বলা হচ্ছে ,যেখানে হিসেব করা হয়েছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার পরে কত মানুষ মারা গেছেন।কিন্তু মৃত্যুর পরিমানের উপরে ভিত্তি করে হিসেব করা জটিল। পাশাপাশি এটা বলাও ঠিক হবেনা যে যারা কোভিড-১৯ এর ফলে মারা যাননি তারা ” সুস্থতা লাভ করেছিলেন”। কারন অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ ছিলেন৷
আবার পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর পরিমান ০.০৩% থেকে ০.০৬% পর্যন্ত। এটিও সত্যি নয়৷
আমরা যদি কেবল ইংল্যান্ডের দিকে তাকাই, ন্যাশনাল স্টাটাসিক্স অফিসের বরাতে পাওয়া আঞ্চলিক পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে ৫৩,১০২ জন মানুষ কোভিড-১৯ এর ফলে মারা গেছেন অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত। তাদের মৃত্যুসনদে কোভিডের কথা উল্লেখ আছে৷ এবার দেখুন ইংল্যান্ডের বর্তমান জনসংখ্যা ধরা হয় আনুমানিক ৫৬ মিলিয়ন যার মানে হলো মোট জনসংখ্যার ০.০৯% মানুষ ইতোমধ্যেই কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন৷
অর্থাৎ ইংল্যান্ডের মৃত্যুহার পোস্টে দেখানো সংখ্যার থেকে মোটেই কম না৷ এমনকি দেশের প্রত্যেক নাগরিক যদি আক্রান্ত হয় তবুও।
অবশ্যই, যেভাবে আমরা উপরে লিখেছি, এটা বাস্তব সম্মত ময় যে দেশের প্রত্যেকটি মানুষই ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে৷ যার মানে হলো সঠিক মৃত্যুহার তাৎপর্যমূলকভাবেই পোস্টে দেখানো পরিসংখ্যানের থেকে বেশি৷
বিজ্ঞানীদের অনুমান হলো, জুনের শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের মৃত্যুহার ০.৯ শতাংশের বেশি ছিলো৷ যা পোস্টে যেভাবে দেখানো হচ্ছে তার থেকে বিপজ্জনক।
কোভিড আক্রান্ত হলেও মৃত্যু সাধারণত বয়স এবং স্বাস্থগত অবস্থার উপরে নির্ভর করে। বিষয়ত বয়স্ক মানুষদের এক্ষেত্রে ঝুকি বেশি থাকে৷ তাই বয়স ও স্বাস্থগত অবস্থা বা স্বাস্থ্যসেবার উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের মৃত্যুহার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে৷ পাশাপাশি অন্য আরো কারন থাকতে পারে যা চিহ্নিত করা যায়নি৷
তবে এটাও বলা যায়, এখনো এই রোগে মৃত্যুহার কিছুটা নিচের দিকে এবং ভবিষ্যতে চিকিৎসা সেবার অগ্রগতিতে এই হার আরো কমতে পারে৷
“মৃত্যু হয়নি” মানে “সুস্থ” নন
আমাদের মনে রাখতে হবে “মৃত্যু হয়নি” মানেই তিনি ” সুস্থ” হয়ে যাননি। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থতা বলতে বোঝায় স্বাস্থ্য আবার পূর্বের সাধারণ অবস্থায় ফিরে যাওয়া। আমাদের মনে রাখতে হবে যে এখনো যারা কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন তাদেরও নানান স্বাস্থগত তৈরী হয়েছে যাকে বলা হচ্ছে “লং কোভিড“।
ফাইজার ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা কেমন ?
এদিকে ফাইজার ভ্যাকসিনের সম্পর্ক যা কিছু জানা যাচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে এই ভ্যকসিন অন্তত ৯০% কার্যকরীতার প্রমান দিচ্ছে৷ অর্থাৎ যারা ভ্যাক্সিন নেননি তাদের থেকে যারা ভাক্সিন নিয়েছেন তাদের ৯০% সংক্রামণ কম দেখা গেছে ৷ যদিও এটির পূর্ন ট্রায়েল এখনো সম্ভব হয়নি ৷ হয়তো ভবিষ্যতে এটা পরিবর্তন হতে পারে৷
সুতরাং এখনি আগ বাড়িয়ে কিছু বলা মুশকিল।
Fullfact.org অবলম্বনে