হেলথ চেক

হেলথ চেক

December 26, 2020, 6:47 pm

Updated: December 26, 2020, 7:41 pm

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বিভ্রান্তিকর ভাবে ১৯৫০ সালের ঔষধের সাথে তুলনা

Author: BD FactCheck Published: December 26, 2020, 6:47 pm | Updated: December 26, 2020, 7:41 pm

সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরীর দ্রুততার জন্য হুশিয়ারি দিয়ে এই ভ্যাকসিনকে ১৯৫০ সালের দিকে তৈরী থ্যালিডোমাইড ভ্যাকসিনের সাথে তুলনা দেয়া হচ্ছে। থ্যালিডোমাইড হলো একটি অধুনা-নিষিদ্ধ ব্যথানাশক ঔষধ যা বিপুল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দরুন নিষিদ্ধ হয়।

কিন্তু আমেরিকার ঔষধ অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সে সময়ও থ্যালিডোমাইডকে অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেছিলো। অবশ্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং স্বাধীনভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে এফডিএ।

৩০ নভেম্বর ২০২০ সালের একটি টুইটে লেখা হয়েছে- “ মাত্র ৮ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরী করা হচ্ছে? এটা কোনো বিপদ তৈরী করবেনা তো? ১৯৫৭ সালে থ্যালিডোমাইড ভ্যাকসিনও এরকম দ্রুততায় তৈরী করা হয়েছিলো গর্ভবতী মায়েদের বমিভাব এবং ইনসোমনিয়ার ঔষধ হিসাবে। যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিকলঙ্গ শিশু জন্মানোর অভিযোগে ১৯৬২ সালে এই ঔষধ তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত ৫০ টি দেশে ঔষধটি বিক্রি করা হয়েছিলো।”

টুইটারের একটি স্ক্রিনশট

এরকম একই দাবী ফেসবুকেও দেখা গেছে। দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

পোস্টে যে থ্যালিডোমাইড ঔষধের কথা বলা হয়েছিলো তা ১৯৫০ এর দশকে একটি চাঞ্চল্যকর স্বাস্থ্য কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়। ১৯৬২ সালে এই ঔষধ তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত ৫০ টি দেশে ঔষধটি বিপণন করা হয়। বিজ্ঞানীরা এই ঔষধের সাথে হাজারের অধিক সদ্য জন্মানো শিশুর বিকলঙ্গতার সংযোগ খুজে পায়। যা সে সময় আলোড়ন তুলেছিলো।

কিন্তু সেই ঔষধকে বর্তমান সময়ে নভেল করোনাভাইরাস রোগের জন্য তৈরী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সাথে এক করে দেখার সুযোগ নেই।

দি সায়েন্স মিউজিয়াম অফ লন্ডনের ঔষধের ইতিহাস পেজে বলা হয় – “১৯৫০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা জানতেন না ঔষধের প্রতিক্রিয়া প্লাসেন্টাল বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং গর্ভাশয়ের ভ্রূনে পৌছাতে পারে। ফলে তারা গর্ভাবস্থার সময়ে এই ঔষধ গ্রহনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেননি।”

তবে আমেরিকা সেসময়ও এই ঔষধ অনুমোদন এবং বিপণনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো।

সেই সময়ে ড: ফ্রান্সিস কেলসি ইউএস ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিন্সট্রেশন (এফডিএ) এর ঔষধ অনুমোদনের দায়িত্বে ছিলেন। থ্যালিডোমাইডকে তিনি ফার্মা কোম্পানিগুলোর “অনুমোদন দেয়ার চাপ” থাকা সত্ত্বেই “পর্যাপ্ত প্রমাণাদি” না থাকায় অনুমোদন দেননি।

এফডিএ এর ইতিহাস দেখলে বোঝা যায় সংস্থাটি ঔষধ অনুমোদনের ব্যাপারে শক্ত নিয়ম কানুন অনুসরণ করে থাকে।

পেনসেলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির মেডিকেল ইথিক্স এন্ড হেলথ পলিসি বিভাগের বায়োস্টাটিক্সের অধ্যাপক ড: সুসান এলেনবার্গের মতে- “থ্যালিডোমাইড যখন তৈরী হয়েছিলো তার থেকে এই দুনিয়া অনেক আলাদা। থ্যালিডোমাইড এমন সময় বানানো হয়েছিলো যখন ঔষধ অনুমোদনের জন্য শক্ত নিয়ম কানুন খুব কম ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হতো।”

আমেরিকায় প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়ার পর, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় জরুরী ভিত্তিতে “emergency use authorization (EUA)” অনুসারে ফাইজার এবং বায়োএনটেক কে ভ্যাকসিন উৎপাদনের নির্দেশ দেয় এফডিএ।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আমেরিকা ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হয়েছে। আশা করা যায় মাসের শেষে ২০ মিলিয়ন মানুষ ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আসবে।

এফডিএ কমিশনার স্টেফেন হান এর মতে – “কার্যক্ষমতা প্রমান হয়েছে মানে এইনা যে গুণগত মান নিয়ে আপোষ হবে । মেডিকেল পন্য এখনো কঠোর গবেষনা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাবে।”

এএফপি ফ্যাক্টচেক অবলম্বনে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *