
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ৭ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার কথা বলেননি বিল গেটস
Author: BD FactCheck Published: December 2, 2020, 11:21 pm | Updated: December 2, 2020, 11:43 pm
ফেসবুকে একটি প্রতিবেদন হাজারের অধিক বার শেয়ার হয়েছে , যেখানে দাবী করা হচ্ছে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলেছেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ফলে ৭০০,০০০ মানুষ মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের ‘শিকার’ হতে পারে। এই দাবীটি বিভ্রান্তিকর ।
এই বছরের শুরুতে একটি সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন ৭০০,০০০ মানুষের ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শিকার হবার সম্ভবনা আছে। কিন্তু সেখানে তিনি মৃত্যু কিংবা স্থায়ী বিকলঙ্গতা নিয়া কোনো কথা বলেন নি।
সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষণ টুল ক্রাউড ট্যাঙ্গল অনুসারে , প্রতিবেদনটি ফেসবুকে ১৯,০০০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। সেসব পোস্টে দাবী করা হচ্ছে বিল এন্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার বিল গেটস “ পূর্বাভাষ দিয়েছেন ৭০০,০০০ মানুষ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনাইজেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হতে পারেন।’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে জার্মান ভিত্তিক ওয়েবসাইট KenFM দাবী করেছে ,বিল গেটসের এই হিসাবে কেবল জার্মানিতে ৮৩০০ মানুষ মৃত্যু বা দীঘস্থায়ী বিকলাঙ্গতার মুখে পরবে। প্রায়শই এই সাইটটি নিজেদের “alternative viewpoints” এর উৎস হিসেবে দাবী করে থাকে।
প্রতিবেদনটিতে তারা লিখেছে , “ গেটসের মতে, জার্মানির ৮৩ মিলিয়ন বাসিন্দাদের মধ্যে ৮৩০০ জন করোনা ভ্যাকসিনেশনের সাইড ইফেক্টের ভিক্টিম হবে। যাকে তিনি বলছেন মৃত্যু বা স্থায়ী বিকলঙ্গতা।”

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরে বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে এটি ব্যাপক শেয়ার করা হয়েছে।
মূলত এই তথ্যটি ছড়ানো হচ্ছে সিএনবিসিতে দেয়া বিল গেটসের একটা সাক্ষাৎকারের উপরে ভিত্তি করে ।
কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে যা বলেছেন গেটস
প্রথমত, গেটস কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের ফলে ৭০০,০০ মানুষের মৃত্যু বা স্থায়ী বিকলঙ্গতার বিষয়ে কিছুই বলেননি।
মূলত সিবিসির ইন্টারভিউতে তিনি ব্যাখা করে দেখিয়েছেন- ভ্যাকসিনেশনের অনেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শিকার হতেও পারেন। তার মতে, প্রতি ১০,০০০ জনে যদি একজন হয় তবে বিশ্বজুরে এই সংখ্যাটা ৭০০,০০০ জন।
কিন্তু ফেসবুক বা প্রতিবেদনে যেভাবে মৃত্যু আর স্থায়ী বিকলঙ্গতার কথা বলা হয়েছে তিনি এমন কিছুই সেখানে দাবী করেননি।
সিবিসির সাথে আলাপে গেটস বলেছিলেন -’ মানুষের উপরে ভ্যাকসিনের কার্যকারীতে প্রমান সব সময়েই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন ভ্যাকসিন দরকার যা বেশি বয়সীদের উপরে প্রয়োগ করা হবে , কারন তাদের মৃত্যূ ঝুঁকি সব থেকে বেশি। সুতরাং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রাখা চলবে না।”
তিনি আরও বলেন- “ যদি প্রতি ১০,০০০ জনে একজনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয় , তার মানে বিশ্বব্যাপি ৭০০,০০০ জন এর দ্বারা ভুগবে। সুতরাং বিশাল পরিসরে সকল বয়সীদের জন্য নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রাখতে হবে।”
বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের অবস্থা
এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরীর জন্য বেশ জোরদার প্রচেষ্টা চলছে। বৈশ্বিকভাবে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য মোতাবেক এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়া সকল ভ্যাকসিনের ৯০% এর অধিক কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবী করা হচ্ছে ।
ফার্মা কোম্পানি ফাইজার এবং বায়োএনটেক এই মাসেই জানিয়েছে তাদের তৈরী ভ্যাকসিন ৯৫% কার্যকরি , যেখানে মার্কিন কোম্পানী মডার্না গত সপ্তাহে তাদের ভ্যাকসিনের ৯৪.৫% কার্যকারিতার প্রমান পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
অবশ্য AstraZeneca and Oxford University তাদের ভ্যাকসিনের গড়পড়তা সাফল্যের দাবী করেছে। তাদের মতে এই ভ্যাকসিন ৭০ পার্সেন্ট পর্যন্ত কার্যকরি । এখন পর্যন্ত ২৩,০০০ লোকের উপরে পরীক্ষায় তারা এই ফলাফল পেয়েছে।
ফাইজার ও তার সহযোগীরা দাবী করছে, তারা ৪৩,০০০ অংশগ্রহণকারীদের উপরে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়েল করেছে এবং সেখানে তারা বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সন্ধান পায়নি। ৪ শতাংশের কম মানুষের ক্লান্তি এবং মাথা ব্যাথার মত ছোট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ।
যে সকল স্বেচ্ছাসেবক মডার্না এবং ফাইজার ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন তাদের সাথেও কথা বলে একই বক্তব্য পাওয়া গেছে। সায়েন্স ম্যাগাজিনের তথ্য মতে “ ফাইজার এবং মডার্না ভ্যাকসিন ট্রায়েলে অংশ নিয়েছে এমন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেবল ২ শতাংশের 39°C থেকে 40°C” পর্যন্ত জ্বর দেখা গেছে।”
এএফপি ফ্যাক্ট চেক অবলম্বনে