
জেনে নিন কবে নাগাদ আসছে কোন কোভিড ভ্যাকসিন?
Author: BD FactCheck Published: December 9, 2020, 3:02 pm | Updated: December 9, 2020, 7:16 pm
ফাইজার ও বায়োএনটেকের তৈরী ভ্যাকসিন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে এবং প্রয়োগও শুরু হয়েছে। কিন্তু অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য ভ্যাকসিন এখন কোন পর্যায়ে আছে এবং ফাইজারের ভ্যাকসিনের সাথে এর মিল অমিলই বা কতোটা?
ভ্যাকসিন কেন প্রয়োজন?
বিশ্বের সাধারণ মানুষ এখনো করোনাভাইরাসের হুমকির সম্মুখীন। তবে মানুষের চলাচলে বর্তমান বিধি-নিষেধের কারণে মৃত্যুহার কিছুটা কম এখন।
একটি ভ্যাকসিন আসলে তা করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পর্যাপ্তভাবে শক্তিশালি করবে এবং কোভিড-১৯ জনিত প্রাণহানি কমাবে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চিকিতসার পাশাপাশি ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত একমাত্র পথ।
ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন:
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথম সাফল্য আসে গত নভেম্বরে ফাইজার/বায়োএনটেক তাদের ফলাফল জানানোর পর।
১. ফাইজার জানায় তাদের ভ্যাকসিন শতকরা ৯৫ ভাগ কার্যকরী
২. যুক্তরাজ্যে ৪ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে
৩. ৩ সপ্তাহ বিরতি দিয়ে মোট দুটি ডোজে ভ্যাকসিনটি দিতে হয়
৪. ট্রায়ালে প্রায় ৪৩ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হয়েছে যাদের কোন ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি
এই ভ্যাকসিনটি মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। বরফভর্তি ও জিপিএস ট্র্যাকার সমৃদ্ধ বিশেষ বাক্সতে করে ভ্যাকসিনটি পরিবহন করা হবে।
ডিসেম্বরের ২ তারিখে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ফাইজারের ভ্যাকসিনটি সাধারণের মধ্যে প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে।
এই ভ্যাকসিনটি নতুন প্রযুক্তির যেখানে আরএনএ প্রযুক্তি এবং করোনাভাইরাসের জেনেটিক কোডের ক্ষুদ্র একটি অংশ ব্যবহার করেছে। এর মাধ্যমে মানব শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব দেয়া হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এটিকে চিহ্নিত করে আক্রমণ করা শুরু করে।
মানব শরীরে আরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ব্যবহার এর আগে কখনো হয়নি, অবশ্য অন্যান্য রোগের জন্য তৈরী ভ্যাকসিনের মানব ট্রায়ালে এর আগে এটি শুধু ব্যবহার হয়েছে।
অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন:
ট্রায়ালে দেখা গেছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নেয়া মানুষের শতকরা ৭০ জন করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে সক্ষম। ফলাফলে ভ্যাকসিনটি অপেক্ষাকৃত বেশী বয়সীদের মধ্যে অধিক কার্যকর বলে জানা গেছে।
আশাব্যঞ্জক তথ্য হচ্ছে নিখুঁতভাবে এই ভ্যাকসিনটি দিতে পারলে কার্যকারিতা শতকরা ৯০ জনে পৌছাবে। ভ্যাকসিনটি দুটি ডোজে দিতে হয়। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনটির ১০ কোটি ডোজের অর্ডার দিয়েছে। ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে এর মানব ট্রায়াল এখনো চলমান আছে।
অ্যাস্ট্রাজেনকার এই ভ্যাকসিনটি সবচেয়ে সহজে বন্টনযোগ্য ভ্যাকসিন হতে পারে কারণ এটি খুব বেশী পরিমাণে নিম্ন মাত্রার তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় না।
মডার্নার ভ্যাকসিন:
মডার্নার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ফাইজারের ভ্যাকসিনের মতোই।
কোম্পানিটির তথ্যমতে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মধ্যে এর কার্যকারিতা শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ। আগামী বসন্তের আগে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৫০ লাখ ডোজ আসবে। চার সপ্তাহের ব্যবধানে এটি দুটি ডোজে দিতে হয়। ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে ভ্যাকসিনটির মানব ট্রায়াল হয়েছে যার মধ্যে অর্ধেক মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে আর বাকী অর্ধেককে ডামি ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে।
ফাইজারের ভ্যাকসিনের চেয়ে এই ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণ অপেক্ষাকৃত সহজ কারণ এটি মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৬ মাস রাখা সম্ভব।
অন্যান্য ভ্যাকসিনের সর্বশেষ:
অপেক্ষমান অন্যান্য ভ্যাকসিনের ফলাফলও কিছুদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সদৃশ রাশিয়ার স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিনটি শতকরা ৯২ ভাগ কার্যকর বলে জানা গেছে।
একক ডোজের চেয়ে দুই ডোজেরভ্যাকসিন বেশী কার্যকারিতা দেয় কি না এটা জানতে জেনসেন এর ভ্যাকসিনের জন্য ৩০ হাজার মানুষের উপর ট্রায়াল চালঅনো হচ্ছে।
চীনের উহান ইন্সটিটিউট এ সিনোফার্ম, এবং রাশিয়ার গামালেয়া ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে আছে।
তবে চীনে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে ব্রাজিলে একজনের মৃত্যুে অভিযোগ পাওয়ার পর ট্রায়াল স্থগিত করা হয়েছে।
কারা আগে ভ্যাকসিন পাবেন?
এটা নির্ভর করবে কোথায় কখন করোনা বেশী ছড়াচ্ছে এবং কাদের মধ্যে এটি বেশী কার্যকর। যেমন যুক্তরাজ্যে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা ও সেবাকর্মীদের মধ্যে ভ্যাকসিনটি আগে দেয়া হবে, পরে দেয়া হবে চিকিতসাকর্মী এবং বয়স্কদের। কারণ এখন পর্যন্ত বয়সই কোভিডে প্রাণহানির পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
এখনো যা করার বাকি:
ভ্যাকসিনগুলো যে নিরাপদ তা প্রমাণ করতে হবে। ভ্যাকসিন দেয়অর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অনুমোদন দিতে হবে। তাছাড়া একটি ভ্যাকসিন মানব শরীরে কতদিন কার্যকারিতা ধরে রাখতে পারে গবেষকদের তা এখনো জানার বাকী আছে।
একটি ভ্যাকসিন কি সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারে?
মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সকলের সমান নয়। অতীতে দেখা গেছে বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন অতোটা কার্যকর হয়না কারণ বয়সের সাথে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও দূর্বল হয় এবং কম সাঁড়া দেয়। তবে প্রাপ্ত তথ্য মতে কোভিড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এছাড়া কয়েক ডোজ দিলে এই সমস্যার সমাধান হয়তো সম্ভব, যেভাবে ভ্যাকসিনটির সাথে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে এমন কোন রাসায়নিক যোগ করে দেয়া যেতে পারে।
বিবিসি অবলম্বনে