
ফেসবুক অ্যালগরিদম: জনস্বাস্থ্যে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে?
Author: BD FactCheck Published: December 8, 2020, 12:00 am | Updated: December 8, 2020, 10:44 pm
মে ২০১৯ থেকে মে ২০২০ এর মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য ফেসবুকে সব মিলিয়ে ৩.৮ বিলিয়ন বা ৩৮০ কোটি বার দেখা হয়েছে। এপ্রিল ২০২০ এ কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এই প্রবণতা তুঙ্গে ওঠে যা এক মাসেই ৪৬০ মিলিয়ন ভিউ হয়। জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী জনমত সৃষ্টিকারী প্ল্যাটফর্ম ‘আভাজ’ এর একটি প্রতিবেদন এমনটাই বলছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হল, ‘ফেসবুক অ্যালগরিদম: জনস্বাস্থ্যের প্রতি বড় হুমকি’।
তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর মতো ১০টি প্রথম সারির স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো যে পরিমাণ দেখা হয়েছে, ভুয়া তথ্য দিয়ে থাকে এরকম ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট দেখা হয়েছে তাঁর চেয়ে প্রায় ৪ গুন বেশী। এর মধ্যে মাত্র ১৬% যাচাইকৃত কন্টেন্টে ফেসবুকের পক্ষ থেকে সতর্কতা চিহ্ন দেওয়া হয়। বাকি ৮৪% কন্টেন্টে কোন সতর্কতা চিহ্ন দেয়া হয়না বলে জানাচ্ছে আভাজের প্রতিবেদন। আভাজ এর তথ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুয়া তথ্যের প্রচার কমানোর যে চেষ্টা ফেসবুক করে, ফেসবুকের নিজস্ব অ্যালগরিদমই (গাণিতিক পরিভাষা) সেই চেষ্টাকে বানচাল করে অসত্য খবরের প্রচার অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
সমস্যাসৃষ্টিকারী অ্যালগরিদম
এই বছরের শুরুর দিকে অভিযোগ ওঠে যে বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সংকটের সময় ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপজ্জনক ধরনের ভুয়া তথ্য ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সময় ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেঁটে ফেলার জন্য ফেসবুক বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করায় উদ্যোগী হয় এবং সাধারণ মানুষকে ওয়াকিবহাল ও নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু আভাজ-এর ক্যাম্পেন ডিরেক্টর ফাদি কোরান সংবাদ সংস্থা রয়টার্স কে বলেন যে, ফেসবুকের অ্যালগরিদমই তাদের প্রয়াস বানচাল করে দিচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “মার্ক জুকেরবার্গ মহামারীর সময় নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অ্যালগরিদমই ফেসবুকের ২.৭ বিলিয়ন (২৭০ কোটি) ব্যবহারকারীর অনেককে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অসত্য খবর প্রদানকারী নেটওয়ার্কের দিকে ঠেলে দিয়ে এই চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।”
২০১৮ সালে অক্সফোর্ডের একটি গবেষণায় ফেসবুকের অ্যালগরিদমে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়। দেখা যায় যে ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি সময় ফেসবুকে ধরে রাখার জন্য কাজ করে সেটি। ২০২০ এর মে তে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের কর্মীদের একাংশ তাঁদের উর্ধতন কর্তাব্যক্তিদের জানান যে ব্যবহারকারী ধরে রাখার জন্য ফেসবুকের অ্যালগরিদম মানুষের মধ্যে দূরত্ব ও বিভেদ সৃষ্টি করছে।
২৮ মে ২০১৯ থেকে ২৭ মে ২০২০-র মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুয়া খবর ছড়ায় এমন ৮২টি ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে আভাজ। এই সাইটগুলি নির্ভরযোগ্য নয় বলে চিহ্নিত করেছিল নিউজগার্ড। সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মতো পাঁচ দেশে ছড়িয়ে থাকা ‘সুপারস্প্রেডার’ বলে পরিচিত ৪২টি ফেসবুক পেজও খতিয়ে দেখে ওই সংস্থাটি। সামগ্রিকভাবে ওই সময়ের মধ্যে এগুলো থেকে এমন বিষয়বস্তু প্রচার করা হয়েছে যা ফেসবুকে ১৩০ মিলিয়ন মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় (৩.৮ বিলিয়ন ভিউ এর সমতুল্য)। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সকল ভুয়া তথ্য এই নমুনাটির মধ্যে আসেনি।
ভুয়া তথ্য প্রদানকারী বলে চিহ্নিত ১০ টি শীর্ষ ওয়েবসাইটের ৪৩% ভিউ আসে ফেসবুকের পাবলিক পেজ বা সবাই দেখতে পারেন এমন পেজ থেকে। উপরের দিকে থাকা এরকম ৪২টি ফেসবুক পেজ একাই আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ভিউ সৃষ্টি করে।
আভাজ তাদের প্রতিবেদনে দেখিয়েছে কিভাবে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রকাশ করা ওয়েবসাইটের পাঠক বৃদ্ধি পায়।


নিউজগার্ডের রেটিংয়ের ভিত্তিতে ওই পেজগুলির মতাদর্শগত আনুগত্য বোঝার চেষ্টা করে আভাজ। দেখা যায় যে ৬১% পেজ সরাসরি কোন আদর্শগত শিবিরের অনুগামী নয়। তবে ২৫.৬% হল গোঁড়া ডানপন্থী, শতাংশের হিসেবে যা একক বৃহত্তম গোষ্ঠী।
অবশ্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ফেসবুকের এক কর্মকর্তা বলেন, ”ভুল তথ্য প্রতিরোধে আভাজের লক্ষ্যের সাথে আমরা একমত। তবে ভুল তথ্য ছড়াতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি আভাজের প্রতিবেদনে তা প্রতিফলিত হয়নি।”
তিনি জানান, ”বিশ্বের সর্বত্র আমাদের ফ্যাক্ট চেকারদের সহায়তায় আমরা এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ফেসবুক পোস্টে সতর্কতা লেবেল সংযুক্ত করেছি এবং ক্ষতি করতে পারে এরকম ৭ মিলিয়ন পোস্ট মুছে দিয়েছি।”
সমাধান
প্রতিবেদনটিতে ফেসবুকের কাছে দুই স্তরের সমাধান প্রক্রিয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এক, ব্যবহারকারীদের যাচাই করা সঠিক তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা যার ফলে ভুয়া তথ্যে মানুষের আস্থা ৫০% কমে যাবে; দুই, যেসব পোস্ট ও ব্যবহারকারী বারবার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মিথ্যা পোস্ট দিবে তাদের শনাক্ত করে ডাউনগ্রেড করা বা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন চিহ্ন রাখা এবং ৮০% রিচ কমিয়ে দেয়া।
(প্রতিবেদনটি বুম ইংরেজী ও রয়টার্সের প্রতিবেদনের আলোকে তৈরী)