ফিচারড নিউজ

ফিচারড নিউজ

June 30, 2020, 9:50 am

Updated: June 30, 2020, 9:50 am

বাংলাদেশী গণমাধ্যমে চীনা ভ্যাকসিনের “চুড়ান্ত অনুমোদন”: বাস্তবতা কী?

Author: Zahed Arman Published: June 30, 2020, 9:50 am | Updated: June 30, 2020, 9:50 am

বাংলাদেশের বেশকিছু গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে, চীন বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। দেখুন এ সংক্রান্ত সংবাদগুলো।

সময় টিভি: বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করল চীন

বাংলাদেশ টুডে: বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করল চীন

জাগো নিউজ: বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করলো চীন, প্রয়োগের অনুমোদন

দৈনিক ইনকিলাব: বিশ্বে প্রথম করোনা নিয়ে বড় সুখবর দিলো চীন

বিডিটোয়েন্টিফোরলাইভ ডটকম: বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করল চীন

সময়টিভি’র সংবাদে বলা হচ্ছে, 

“করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বের শতাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন এগিয়ে আছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে এবার করোনার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে চীন। সোমবার (২৯ জুন) এ খবর দিয়েছে ইয়াহু নিউজ। খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনীর গবেষণা শাখা এবং স্যানসিনো বায়োলজিকসের (৬১৮৫.এইচকে) তৈরি একটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মানব শরীরে প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে।”

সময়টিভির সংবাদে আরও বলা হচ্ছে,

“আপাতত ভ্যাকসিন শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যবহার করা হবে। স্যানসিনো বলেছে, চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন গত ২৫ জুন এডি৫-এনকোভ ভ্যাকসিনটি সৈন্যদের দেহে এক বছরের জন্য প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় দারুণভাবে সফল হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে কিনা তা নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।”

অন্য সংবাদ মাধ্যমগুলো মূলত একই সংবাদ হুবহু কপি করে প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে করা এসব প্রতিবেদনে বেশ কিছু তথ্যের গরমিল রয়েছে। যেমন, চীনই প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে কিনা? ক্নিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে থাকা কোনো ভ্যাকসিনকে চুড়ান্ত অনুমোদন বলা যায় কিনা? আসুন এই দুটি প্রশ্নকে সামনে রেখে বিশ্লেষণ করা যাক।

এডি৫-এনকোভ ভ্যাকসিনটির কি চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে?

না। এডি৫-এনকোভ ভ্যাকসিনটির চুড়ান্ত অনুমোদন এখনও দেয়া হয়নি। ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে মাত্র। তৃতীয় ধাপের ফলাফল ইতিবাচক হলেই দেয়া হয় চুড়ান্ত অনুমোদন। 

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর মতে, যে কোনো নতুন ভ্যাকসিনের আবিষ্কার মোট ছয়টি ধাপে সম্পন্ন হয়। এগুলো হচ্ছে:

১. অনুসন্ধান

২. প্রাক-ক্লিনিকাল ধাপ

৩. ক্লিনিকাল ধাপ

৪. নিয়ন্ত্রক পর্যালোচনা এবং অনুমোদন

৫. উৎপাদন, ও

৬. মান নিয়ন্ত্রণ

এখানে উল্লেখ্য যে, ক্লিনিক্যাল ধাপ তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। 

প্রথম পর্যায়ে সাধারণত ২০-১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করা হয়। এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা ডোজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং কার্যকারিতা জানার চেষ্টা করেন। 

যদি প্রথম পর্যায়ে কোনও গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে কয়েক শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের উপর প্রয়োগ করা হয়। এই পর্যায়ে স্বল্প-মেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং কী পরিমাণ ডোজ গ্রহণ করলে কী পরিমাণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় তা জানার চেষ্টা করা হয়। 

তৃতীয় পর্যায়ে সাধারণত কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেয়। এ পর্যায়ে গবেষকরা পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারেন এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলিও সনাক্ত করতে পারেন।

এই তিনটি পর্যায় শেষ হতে সাধারণত দেড় থেকে দুই বছরের মতো সময় লাগে। এডি৫-এনকোভ ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল ধাপের দুটি পর্যায় শেষ করেছে বলা যায় যেমনটি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এসেছে। ভ্যাকসিনটি চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আরও ব্যাপকভিত্তিক মানুষের উপর পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

এটা পরিষ্কার যে আরও ব্যাপক ভিত্তিক মানুষের উপর প্রয়োগ করার জন্যই আপাতত ভ্যাকসিন শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন গত ২৫ জুন এডি৫-এনকোভ ভ্যাকসিনটি সৈন্যদের দেহে এক বছরের জন্য প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যায়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেলেই দেয়া হবে চুড়ান্ত অনুমোদন। সুতরাং এই পর্যায় শেষের আগে “চুড়ান্ত অনুমোদন” দিয়েছে বলাটা সমীচীন নয়। বাইরের কোনো গণমাধ্যম এটাকে “চুড়ান্ত অনুমোদন” বলে নি। সংবাদ শিরোনামকে আকর্ষণীয় করতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এ শব্দ দুটো ব্যবহার করেছে। 

চীনই প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে ? 

বর্তমানে প্রায় ১২টির মতো ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন এমআরএনএ-১২৭৩ তৃতীয় পর্যায়ে ত্রিশ হাজার মানুষের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি এজেডডি১২২২ ভ্যাকসিনটিও দ্বিতীয়-তৃতীয় ধাপে রয়েছে। সুতরাং চীন নয়, বরং আরও অনেক দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন মানবদেহের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *