
ভুয়া তথ্য ভিত্তিক জোরালো প্রচারণার মুখে করোনার ভ্যাকসিন
Author: BD FactCheck Published: December 3, 2020, 10:29 pm | Updated: December 4, 2020, 12:41 pm
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে করোনার ভ্যাকসিন প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হচ্ছে বেশ কিছু ছোট ছোট ফেসবুকে গ্রুপের মাধ্যমে।
ভুয়া তথ্য সংক্রান্ত গবেষকরা অনেকদিন যাবত অপেক্ষা করছে যে এসব ভ্যাক্সিন-বিরোধী গ্রুপগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে খবর বের হয়, ফেসবুক একাধিক ভ্যাক্সিন-বিরোধী জনপ্রিয় প্রোফাইল এবং পেইজ ব্যান করেছে। এসব পেইজ ও প্রোফাইল থেকে ভ্যাক্সিন-বিরোধী ভুয়া তথ্য লাখ লাখ মানুষের মাঝে ছড়ানো হয়েছে। উক্ত পদক্ষেপকে গবেষকরা শত আশঙ্কার মাঝেও স্বাগত জানিয়েছিল।
ফেসবুকের উক্ত পদক্ষেপটির কিছুটা ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা গেছে। কিন্তু গবেষক এবং গণস্বাস্থ্য পরামর্শকরা নতুন এক গবেষণায় বলছে, মূলত ভ্যাকসিন-বিরোধী এসব প্রচারণার বেশি প্রভাব আসলে ছোটো ছোটো সক্রিয় ফেসবুক গ্রুপের যারা মাসের পর মাস ভ্যাকসিন-বিরোধী বার্তা প্রচার করছে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিল জনসন জানান, “করোনা নিয়ে আমরা যেসব ভুয়া খবর দেখছি তা ফেসবুকে আগে থেকেই ছিল। ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকেই এসব প্রচারণা শুরু হয়েছে।“
বেশ কিছু ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াধীন আছে, কিন্তু বেশীরভাগ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতাধীন আনতে না পারলে ভাইরাসের সংক্রমণ থামানো যাবেনা। গবেষকরা অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলছেন না, ঠিক কতভাগ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ৬০ ভাগ লোককে ভ্যাকসিন দিতে পারলে সংক্রমন ঠেকানো সম্ভব।
তবে ভ্যাকসিনের ব্যাপারে এখনো জনমানসে ভাবনা মিশ্র। আগস্টের এক জরিপে জানা যায়, মাত্র ৪২ ভাগ আমেরিকান মনে করভ্যাকসিন সহজল্ভ্য হলে তারা গ্রহণ করবে। সেপ্টেম্বরে পিউ রিসার্চ সেন্টার এর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দ্রুতই ভ্যাকসিন নিবে বলে মনে করছিল তাদের সংখ্যা মে মাস থেকে সেপ্টেম্বরে এসে কমেছে।
নেচার এ প্রকাশিত জার্নালে একদল গবেষক জানিয়েছে, মূলত ভ্যাকসিন-বিরোধী আন্দোলনগুলোই এইখানে ভূমিকা রাখছে। তারা হয়ত সংখ্যায় কম, কিন্তু ছোট ছোট ভাগে তারা খুব সক্রিয়, আবেগি এবং সহজে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও তারা সহজে তাদের নির্দিষ্ট গ্রুপের বাইরেও বার্তা পৌছাতে পারে, ফলে তারা গ্রুপের বাইরের লোকদেরকেও প্রভাবিত করতে পারে। গবেষকদের দাবি, “এটি টিউমারের মত বেড়ে চলছে”
ফেসবুক এসবের বিরুদ্ধেই কাজ করছে বিশেষ করে এই মহামারীতে। এবং করোনা সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য ঠেকাতে তারা কিছুটা সফলও বটে।
ফেসবুকের মুখপাত্র আন্দ্রে ভ্যালোন জানান, তারা করোনা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য ছড়াতে এবং বিভ্রান্তিকর নানা বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। “যে সকল ভুয়া তথ্য মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে তা সরিয়ে দিয়ে মানুষকে ‘কভিড ইনফরমেশন সেন্টার’ এর লিংকে পাঠিয়ে দিচ্ছি যেটি পৃথিবীর ১৮৯টি দেশে আছে”।
লন্ডন ভিত্তিক সেন্টার ফর কাউণ্টারিং ডিজিটাল হেইট এর একটি রিপোর্ট মতে, ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৮ মিলিয়ন লোকের কাছে পৌছেছে ভ্যাকসিন-বিরোধী এসব প্রচারণা। এছাড়াও করোনা সংক্রান্ত নানা ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব তো আছেই যা বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামে পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি ফার্স্ট ড্রাফটের।
ফেসবুক ইতিমধ্যে কিছু বেশ বড় পেইজ ব্যান করেছে তাদের মধ্যে আছে ‘দ্য হাইওয়ার’ যেখানে করোনা নিয়ে ‘মারাত্মক ভুয়া’ তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। একইভাবে ইউটিউবও উক্ত নামের চ্যানেলটি সরিয়ে দিয়েছে।
আরেকটি ফেসবুক পোস্টমতে, বিগ ট্রি নামের আরেকটি পেইজও ফেসবুক সরিয়ে দিয়েছে। হাই ওয়ারের প্রায় ৫০০ ভিডিও ৩০ মিলিয়ন লোকের কাছে ছড়িয়েছিল বলে জানা যায়। তবে তারা এখনো ইন্সটাগ্রামে সক্রিয় আছে যেখানে তাদের ফলোয়ার প্রায় ২ লাখ।
এর বাইরে ল্যারি কুক নামের একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিয়ার এবং আর সিক্রেট গ্রুপ “স্টপ ম্যান্ডাটরি ভ্যাকসিনেশন” কেও ডিজেবল করেছে ফেসবুক। কুক এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করলেও তার ভক্তকুলকে তিনি আগেও এই সতর্কবানী দিয়ে ফেসবুকের বাইরে অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকতে নির্দেশ দেন।
গবেষকরা আরো মনে করেন,ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচারের বিষয়টির মাধ্যমে খুব দ্রুতই দর্শকের কাছে পৌছানো যায়। করোনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে মনে করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রেনে ডিরেস্তা।
তিনি আরো মনে করেন, “করোনা মূলত ভ্যাকসিন-বিরোধীদের জন্যে কন্টেন্ট তৈরির মওসুম। এতে ভ্যাকসিনের প্রতি আস্থা কমেছে কেবল তা নয়, মানুষের স্বাভাবিক ইমিউনিটি বাড়ানোর চেষ্টায় গাফলতি এসেছে”।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কলিনা কোলতাই বলেন, “এতসব প্রচারের পরেও কুক বা বিগট্রি’র মত প্রচারণাগুলো ফেসবুকের বাইরে অত প্রচার পায়নি” তিনি আরো বলেন, “আসলে মূলত মানুষ ফেসবুকে অনেক বেশি থিতু হয়ে গেছে, সহজ এবং সবার সাথে যুক্ত থাকার সাধান মাধ্যম”।
নেচারে প্রকাশিত গবেষণাটির সাথে যুক্ত জনসন বলেন, তার নতুন গবেষণামতে ভ্যাকসিন-বিরোধী প্রচারণা প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোকের কাছে পৌছেছে। এছাড়া তারা সহজে মানুষকে বাগে আনতে পারছে।
তাই বড় বড় ফেসবুক গ্রুপগুলো ব্যান করে নিলেই তাদের প্রচারনায় ভাটা পড়বে বলে মনে করার কারণ নেই। এসব ভ্যাকসিন-বিরোধী প্রচারণা খুব দ্রুতই নতুন গল্প, ঘটনা নিয়ে হাজির হয় গোপন বিদ্রোহের মত। যাদের সাথে মানুষের সরাসরি সম্পর্ক আর এটাই তাদের শক্তি”
NBC News অবলম্বনে