ফিচারড নিউজ

ফিচারড নিউজ

October 31, 2020, 3:58 pm

Updated: October 31, 2020, 3:58 pm

ভুয়া তথ্য যেভাবে ভারতে করোনা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে

Author: BD FactCheck Published: October 31, 2020, 3:58 pm | Updated: October 31, 2020, 3:58 pm

ভুয়া তথ্যের সাথে ভারতের লড়াই নতুন নয়। তবে এ বছরের শুরু থেকে এটি অবশ্যই আরো প্রকট হয়েছে। কোভিড সংক্রমণ থেক বাচতে গোমূত্র পান করে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি ভেষজ সাপ্লিমেন্ট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যকে করোনা প্রতিরোধক ও নিরামক বলে প্রমাণহীন ভুয়া দাবি করে সেটা প্রচার করলে তাতে অনেকের আর্থিক ফায়দা আছে, কিন্তু সেই দাবিকে অসত্য প্রমাণ করলে সেই ফায়দা বন্ধ হয়ে যায়।

ভুয়া তথ্যে বিশ্বাস করার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। সাধারণত মানুষ অন্য কেউ/কিছুর প্রতি দায় চাপানোতে আশ্চর্য একধরনের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ভারতে চীনা চেহারার মানুষের উপর যেভাবে করোনার দোষ চাপানো হয়েছিল এটা অনেকটা সেরকম। এই যুক্তি দিয়ে যেসব ভারতীয়দের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে তাদের কথা কেউ চিন্তা করেনা।

আতঙ্কিত মানুষ অনেক অযৌক্তিক আচরণ করতে পারে। অনেকে মনে করেন স্বাস্থ্যকর্মী ও এয়ারলাইন্সের স্টাফরা করোনা ছড়ানোর জন্য দায়ী, অথচ তারা কেবল তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। করোনার সাথে কারো চেহারা কিংবা পেশার কোন সম্পর্ক আছে এমন ভুয়া তথ্য বিশ্বাস করার পিছনে কারণ আর যাই থাকুক, এমন চিন্তার প্রভাব খুব ক্ষতিকর।

একইসাথে করোনা প্রতিরোধক ও নিরামক, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী হিসেবে অনেক কিছুর কথা বলা হচ্ছে যা এই মহামারির সময় সবচেয়ে বড় ঝুকি। প্রথমত: এটি মানুষকে অযথা স্বাস্থ্যঝুকিতে ফেলবে যা না করলে হয়তো এই মহামারির সময় তাদের হাসপাতালে যাওয়া লাগতো না।

দ্বিতীয়ত: এসব খাদ্যদ্রব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কিংবা ভালো রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলেই যে ভাইরাল সংক্রমণ হবেনা এরকম কোন প্রমাণ নেই।

ভুয়া তথ্যে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করার অনেক কারণ থাকতে পারে। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ হলো (আমার মতে) কোনকিছু শেয়ার, রিটুইট কিংবা ফরোয়ার্ড করার পূর্বে যাচাই না করার প্রবণতা যার প্রভাব খুব ক্ষতিকর। এতে অনেকে অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভূয়া তথ্য ছড়িয়ে থাকেন। কোন তথ্য যাচাই করা কেন প্রয়োজন তা আলোচনার আগে যাচাই না করলে কি হয় সেটা আলোচনা করা যাক।

সাংবাদিকেরা তথ্য যাচাই না করলে কী হতে পারে?

শিকোকান নামে একটি যন্ত্র যা বাতাসের ভাইরাল কণায় হাইপার্চার্জড ইলেকট্রনগুলিকে অকার্যকর করে ফেলতে পারে বলে একটি খবর সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে এটি প্রশংসিত হয়, প্রতিটি বড় মিডিয়া
আউটলেট এটি নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। কেউ একবারও যাচাই করার প্রয়োজনবোধ করেননি যে হাইপারচার্জড ইলেক্ট্রন কী? এটি সাধারণ ইলেকট্রন এর চেয়ে আলাদা কীভাবে? এবং যদি এই ডিভাইসটি সত্যিই প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে, তবে এই ডিভাইসের আশেপাশের লোকদের কী হবে? আমরা নিজেরা প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ত্বক, চুল, নখ- সবই প্রোটিন। কীভাবে একটি নির্জীব ডিভাইস ভাইরাল এবং মানব প্রোটিনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে? এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার প্রায় মাসখানেক পরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই ডিভাইস নিয়ে বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ
সম্পর্কে একটি রিপোর্ট করেছিল, তবে ততদিনে ইউরেকা ফোর্বস ইতিমধ্যে প্রতিটি ডিভাইস ২০ রূপিতে বাজারজাত করছিল।

জনগণ যখন কোন তথ্য যাচাই করে না তখন কী হয়?

এক কথায় তখন গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় কোভিড প্রতিরোধক ও নিরামক বলে ছড়ানো বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের দিকে তাকালেই। এগুলোর খুব কমই সাক্ষ্য প্রমাণসহ ছড়িয়েছে।
এরকম তথ্য ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করার কারণ হলো এটি আমাদের অবচেতন মনের পক্ষপাতমূলক চিন্তার সাথে মিলে যায়। গুজব ছড়ানোর জন্য ভারত এক উর্বর ভূমি।

কোন তথ্য যাচাই করা কেন প্রয়োজন এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন হারবাল সাপ্লিমেন্টের কথাই: যেমন এটি কি ক্ষতি করতে পারে? গত কয়েক মাসে অতিরিক্ত ভিটামিন ও হারবাল সাপ্লিমেন্ট নেয়ার কারণে স্বাস্থ্য অবনতি হওয়ার নিয়মিত সংবাদ পাওয়া গেছে।

আয়ুর্বেদিক ও হারবাল পণ্য নিয়ে প্রায়ই একটা কথা শোনা যায় যে এগুলো প্রাকৃতিক। কিন্তু প্রাকৃতিক হলেই কোন পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ব্যাপারটা এমন না। আর্সেনিক এবং মৃত্যুও কিন্তু প্রাকৃতিক। আমাদের উচিত না ভূয়া তথ্য ছড়ানোর সহযোগী হওয়া। নিজে জানুন। যেকোন কিছু প্রশ্ন করে যাচাই করুন।

টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *