পলিটি চেক

পলিটি চেক

October 31, 2020, 11:58 pm

Updated: October 31, 2020, 11:58 pm

মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণায় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কোভিড বিষয়ক গুজব

Author: BD FactCheck Published: October 31, 2020, 11:58 pm | Updated: October 31, 2020, 11:58 pm

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে আগ মুহূর্তে করোনাভাইরাসের বিপর্যয়কে ছোট করে দেখানো এবং কোভিড-১৯ কেন্দ্র করে দেয়া বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ার পক্ষে প্রচারণা চালাতে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।

বৈশ্বিক একটি মহামারির সময় এমন অপপ্রচার শুধু মানুষকে বিভ্রান্তই করে না, বরং এসবে বিশ্বাস করে মানুষ যদি স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেশ ও ভ্যাকসিনকে এড়িয়ে অপ্রমাণিত ঔষধ নেয়া শুরু করেন তখন তা জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার হয়ে দাড়াতে পারে।

অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আভাজ-এ ভুয়া খবর নিয়ে গবেষণা করছেন এমন একজন হলেন লুকা নিকোট্রা। যিনি বলেন, ”গুজবের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এর কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং গণতন্ত্রের উপর মানুষের আস্থা উঠে যায়।”

তিনি আরও বলেন, ”এর একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ করোনা ভ্যাকসিনের কথাই বলা যায়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে ভ্যাকসিন বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠছে তা আশঙ্কাজনক।”

আভাজ-এরই এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন) এর মত জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান যেসব প্রমাণসাপেক্ষ তথ্য দেয় সেগুলোর চেয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক অপপ্রচার ছড়ায় এমন ১০টি ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেইজে প্রায় চারগুণ বেশি ভিউ হয়।

নিকোট্রার মতে ফেসবুককেই এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, ”ফেসবুক কোন নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম নয়। এর ফলে যখনি কোন ব্যবহারকারী লগ-ইন করেন তখন ফেসবুকের অ্যালগোরিদমই ঠিক করে দেয় হাজারো পোস্টের মধ্যে ব্যবহারকারী কোনটা দেখবেন। ব্যবহারকারীকে ফেসবুকে বেশিক্ষণ রাখতে পারবে যেসব পোস্ট সেগুলোই তাকে দেখানো হয়। এমনকি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গও এটা স্বীকার করেছেন যে, যাচাই বাছাই না করা হলে এর অ্যালগোরিদম ব্যবহারকারীর টাইমলাইনে ভুয়া, বিভ্রান্তিকর ও বিভেদ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসবে।”

সব ধরনের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসনের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে কোভিড-১৯ কে ছোট করে দেখার মতো বক্তব্য দেয়া হয়েছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে কোভিড-১৯ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছেন স্বয়ং মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সাম্প্রতিক সময়ে ভুল তথ্য অফলাইনেও ছড়িয়ে পড়ছে যা অনেক সময় রাজপথে আন্দোলন আকারে রূপ নিচ্ছে। আবার কখনো সামাজিক দূরত্ব না মানার দাবিতেও আন্দোলন হচ্ছে।

গত এপ্রিলে মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার প্রদেশটির অধিকাংশ লকডাউনের ঘোষণা দিলে সেটার বিরুদ্ধে স্টেট ক্যাপিটলে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করতে জড়ো হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘লিবারেট মিশিগান’ লিখে টুইট করে এ বিক্ষোভকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেন।
ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে অবহেলা করার বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেছেন, এমনকি তিনি নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও তার এই অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন।

অন্টারিও টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন হেইট, বায়াস এন্ড এক্সট্রিমিজমের পরিচালক বারবারা পেরি বলেন, ”ট্রাম্প নিজে কোভিড আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়াকে তার এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পিছনে যুক্তি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন এবং করোনাকে অতটা গুরুতর নয় আখ্যা দিয়ে এটাকে গুজব হিসেবে অভিহিত করছেন।”

একইসাথে মানুষকে বেশি সময় ধরে রাখার যে ফেসবুক অ্যালগোরিদম পদ্ধতি সেটার সাথে অসত্য তথ্যে পরিপূর্ণ সংবেদনশীল পোস্টে মানুষের বাড়তি আগ্রহও যোগ হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেসবুকের মন্তব্য জানতে চাইলে গ্লোবাল নিউজকে তাদের পক্ষ থেকে কোন উত্তর দেয়া হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত যেকোন ভুয়া তথ্য সম্বলিত পোস্টে ফেসবুক ফ্ল্যাগ করে দিচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পদক্ষেপ যথেষ্ট না।

আভাজ-এর এক পরামর্শ মতে, ফেসবুক শুধু ভুয়া তথ্য সম্বলিত পোস্টকে ফ্ল্যাগ করে দেয়াই যথেষ্ট নয়, বরং শেয়ারকারীকে নোটিফিকেশন দিয়ে জানানো উচিত যে পোস্টটি সত্য নয়।

এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যতো নিকটবর্তী হচ্ছে এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ নিয়ে বিতর্ক জোরালো হচ্ছে তখন ফ্যাক্ট এবং বিজ্ঞান নির্ভর তথ্যের প্রয়োজনীয়তা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

গ্লোব নিউজ থেকে অনূদিত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *