
মার্কিন নির্বাচনে ভুয়া খবর ছড়ানোয় ভারতীয়-বংশোদ্ভুতদের বড় ভূমিকা ছিলো
Author: BD FactCheck Published: November 27, 2020, 10:56 pm | Updated: November 29, 2020, 3:52 pm
মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেনসহ ডেমোক্রেটিক দল ও কামালা হ্যারিসের পক্ষে হোয়াটসঅ্যাপের ভুয়া-খবর পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব ছিলেন নিউ জার্সির প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা অরুন ব্যান্তভাল।
সাধারণত ফেসবুকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ আদান-প্রদান সবসময়ই গোপন থাকে এবং সামাজিক মাধ্যমে যারা বিভ্রান্তিকর কিংবা ভুয়া তথ্য চিহ্নিত করতে কাজ করে তারাও সেসব মেসেজ দেখতে পারে না। প্রায় ২ বিলিয়ন লোক মেসেজিং ক্ষেত্রে হোয়াটসেপের উপর ভরসা করে।
এসব ভুয়া খবরের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে বাইডেনের ৫ সদস্য-বিশিষ্ট দলে ৫৬ বছর বয়সী বান্তভাল জায়গা করে নিয়েছেন। নির্বাচনকালীন তারা কয়েক ডজন ভুয়া বার্তা এবং ৫০টির উপর গ্রাফিক্স-টেক্সট চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
বাইডেনের ক্যাম্পেইনের একাধিক ভলান্টিয়ার দলের সদস্যরা গত ৩ মাসে বিভিন্ন বড় বড় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হয়েছেন। সেখানে তারা ডেমোক্র্যাটদের বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তিকর-ভুয়া তথ্য ছড়াতে দেখলে গ্রুপের মডারেটদের মাধ্যমে সেগুলো সরাতে কাজ করতেন। ফেসবুক-টুইটারে ভুয়া খবর নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ থাকলেও মেসেজিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ এসব উদ্যোগের আওতাধীন নয়। অথচ মধ্য-বয়স্ক ভারতীয় ও লাতিনদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় প্লাটফর্ম এটি।
গবেষক এবং নির্বাচন-পর্যবেক্ষণকারীরা মনে করেন, দক্ষিণ এশীয়দের, বিশেষ করে ভারতীয়-বংশোদ্ভুত মার্কিনিদের ভোট সেখানকার নির্বাচনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। অনেকগুলো অঙ্গরাজ্য যেমন ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়াতে ভোটের ফলাফল খুব কাছাকাছি হয়েছে যার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে জাতীয় ফলাফল।
কার্নেগি এন্ডোমেন্টের গবেষণা অনুযায়ী, ৭২% ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক বাইডেনকে সমর্থন করেছেন। তারা মনে করেন, বাইডেনের জয়ের পথে বাধা হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ানো ভুয়া খবর।
“ইতিমধ্যে আমাদের মাঝে ভুয়া তথ্যের অস্তিত্ব আছে যেহেতু নির্বাচনটি একটি জটিল উপায়ে পরিচালিত হয়” বলে মনে করেন চাভি খান্না যিনি ‘নর্থ ক্যারোলিনা এশিয়ান-আমেরিকান টুগেদার’ নামক অরাজনৈতিক সংগঠনের পরিচালক। এছাড়া তিনি আরো বলেন, “যেহেতু আমরা এই বছর সরাসরি কথা বলার চেয়ে ভার্চুয়াল উপায় বেছে নিয়েছি, ফলে ভুয়া তথ্যের প্রাদুর্ভাব আরো বেড়েছে”।
প্রতিদিন হোয়াটসঅ্যাপ হাজার হাজার শুভেচ্ছা, মিম, রাজনৈতিক প্রপাগান্ডাসহ বিভিন্ন ভিডিও দিয়ে সয়লাব হয়। এছাড়া বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপে কোনো ফরোয়ার্ডকৃত মেসেজের মূল প্রেরক (সেন্ডার) এর খোঁজ পাওয়া বেশ মুশকিলের কাজ।
তবে হোয়াটসঅ্যাপ মনে করে তাদের ভূমিকা এই নির্বাচনে তেমন নেই। ২০১৮ সালে রাজনৈতিক ভুয়া তথ্যের ক্ষেত্রে ব্রাজিল এবং ভারতে তারা মেসেজ ফরোয়ার্ড করার সময়েও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা এনেছিল।
এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটবটের আয়োজন করা হয়েছে যেখানে প্রাপ্ত-তথ্য যাচাই করা সম্ভব। কিন্তু রয়টার্সের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার ভোটারদের বেলায় সেই কার্যক্রম প্রায় শুন্যের কোঠায়।
তবে ট্রাম্পের পক্ষে ক্যাম্পেইন করা একজন রিপাবলিকান জানান, হোয়াটসএপে তারা তেমন প্রচার চালাননি। কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক ভুয়া খবর ছড়িয়েছে বলে দুই পক্ষই স্বীকার করেছে। “দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই ফেইক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে” বলে দাবি অর্লান্ডো’র ব্যবসায়ী কানান শ্রীনিবাসন এর।
যদিও বাইডেনের পক্ষে কাজ করা বান্টভাল বা অন্যরা জানেন না এসব ভুয়া তথ্যের উৎস কোথায়। কিন্তু ভুয়া মেসেজগুলোর শব্দ ও বানান দেখে তাদের কাছে মনে হয়েছে এসব কাজ যারা করছেন তাদের একাংশ ভারতের বাসিন্দা; যারা ট্রাম্পকে উভয় দেশের সম্পর্কের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল প্রার্থী হিসেবে দেখেন।
মার্কিন নির্বাচনে সুই স্টেটগুলোতে ‘বাইডেনের নীতি’ হিসেবে পাকিস্তান, চীন, ইসলাম ও রাজস্ব বিষয়ে তার এমন সব বক্তব্য (যা রয়টার্স দেখেছে) ছড়ানো হয়েছে যেগুলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ব্যান্তভাল বলেন, এসব ভুলভাল প্রচারণা মূলত বয়স্ক ভারতীয় অভিবাসীদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে যারা অপরাধ, সম্পদ আর ধর্ম নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
টেক্সাস এবং নর্থ ক্যারোলিনাতে প্রচার করা হয়েছে, ডেমোক্র্যাটদের পক্ষের ভোটগুলো গণনা করা হচ্ছে না।
চাভি খান্না ধারণা করে বলেন, ২০১৬ সালে নির্বাচনে ভোটদানের পদ্ধতির নানা ভুল-ভ্রান্তি সমাধানে আমরা মাত্র ২ ভাগ সময় দিতাম যেটা এই বার বেড়ে হয়েছে ১৫%। “ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সংখ্যায় অনেক হওয়ায় আমাদের সবগুলোতে ঢুকে প্রচারণা চালাতে হয়েছে” বলেও জানান তিনি।
রয়টার্স অবলম্বনে