মিডিয়া ওয়াচ

মিডিয়া ওয়াচ

November 19, 2020, 9:50 pm

Updated: December 2, 2020, 11:25 pm

মিসইনফরমেশন নিয়ে ৫টি মিথ

Author: BD FactCheck Published: November 19, 2020, 9:50 pm | Updated: December 2, 2020, 11:25 pm

ভুয়া তথ্য আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্যে এখন একটি হুমকি  হয়ে দাড়িয়েছে। অসমর্থনযোগ্য যেকোনো তথ্য সেখানে বিতর্কের পরিবেশ নষ্ট করে, ভোটারদের বিভ্রান্ত করে এবং বিপরীত-পক্ষকে আক্রমণ করতে সমর্থন যোগায়। মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতি নির্বাচনের শেষ দিনগুলোতে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে একাধিক ভুয়া মেসেজ ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে কিন্তু কতভাগ মার্কিনী সে ভুয়া মেসেজে বিশ্বাস করেছিল কিংবা কেমন ছিল সেসব ভুয়া মেসেজের প্রভাব? এমনকি কিছু কিছু খবরমাধ্যমে এসব প্রশ্নের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর খবরও প্রচার করেছে। এরকম পাচটি মিথ নিয়ে আজকের আলোচনাঃ

মিথ নং ১: বেশিরভাগ মার্কিনীরা অনলাইনে নিজস্ব বাবলে বাস করে 

নিজের বিদায়ী বক্তৃতায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছিলেন, “আমরা আমাদের নিজস্ব বেলুনে ঢুকে গেছি, বিশেষ করে আমাদের সামাজিক মাধ্যমের নিউজফিডগুলোতে। সেখানে আমরা এমন সব মানুষের সংস্পর্শে থাকি যারা আসলে আমাদের মতই এবং আমাদের চিন্তাকে খুব কমই চ্যালেঞ্জ করতে পারে”

এরকম ধারণা নিয়ে একটি আর্টিকেলও লেখা হয়েছিল। যেখানে মোস্তফা আল বারমাভি বলেন, “ইন্টারনেটে আমরা একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ পাওয়ার বদলে প্রত্যেকে আলাদা আলাদা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ পেয়েছি যেগুলো দিন-কে দিন একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে”।

কিন্তু বাস্তবে কি তাই? গবেষণায়, ইন্টারনেটে তথ্য পাওয়ার উৎসগুলো থেকে তথ্য নেয়ার ক্ষেত্রে গড়পড়তা মানুষকে ভারসাম্যপূর্ণ এবং বিচিত্র হতে দেখা গেছে ।

হ্যা এটা ঠিক যে, মানুষ তার নিজস্ব মতের সাথে মিলে এমন খবরের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়, কিন্তু একটি ওয়েব ব্রাউজার থেকে ২০০৪-২০০৯ এর প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মানুষের অনলাইন জীবন তাদের আদর্শ দ্বারা বেশ কিছুটা বিভাজিত থাকলেও, বৈচিত্র্য দেখা যায় তার চেয়ে বেশি।  

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কম্পিউটার/ল্যাপটপে ব্যবহারকারীদের চেয়ে আদর্শ দ্বারা কম প্রভাবিত হয়।

ফলে বারাক ওবামার ‘বাবল থিউরি’ কাজ করে কিছু অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে। যেমন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ রিপাবলিক ঘরানার খবরের উৎস মাত্র ৮ ভাগ কট্টরবাদী খবরের ভোক্তা ।

মিথ নং ২: সন্দেহজনক ওয়েবসাইটে খবর পড়ার হার বেড়েছে। 

কিছু ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে অসংখ্য খবর উৎপাদন করা হয় তারপর তা ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক মাধ্যমে। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনের পর সেটি আর স্পষ্ট হয়ে উঠে। এছাড়া অক্সফোর্ডের এক গবেষণাতেও উঠে আসে কিভাবে সেসব পত্রিকার খবর মূলধারার পত্রিকার চেয়ে বেশি প্রচার হয় ।

কিন্তু আমাদের গবেষণায় ওয়েব ব্রাউজার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় মানুষ খুব কমই এসকল পত্রিকা পড়ে থাকে। যেমন, দেখা গেছে আমেরিকার নির্বাচনের আগে সেখানে যেসব পত্রিকা লোকে পড়তো তার মাত্র ৬ ভাগ পত্রিকার ব্যাপারে সন্দেহ করা যাবে। ফলে তাদের মধ্যে আরো কম লোকে তা শেয়ার করে। ফলে সেসব সাইটে খুব কম লোকই ভিজিট করে থাকে। আমাদের পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে মার্কিনিদের মাত্র ২০ ভাগের ভিজিট করা ওয়েবসাইটের প্রতি ১০টার মধ্যে ৬টা এসব ভিত্তিহীন ওয়েবসাইট।   

এমনকি ২০১৬ সালের নির্বাচনকে ঘিরে যেসব ভুয়া খবর টুইটারে এসেছে তার ৮০ ভাগ ছড়িয়েছে ১ ভাগ মার্কিনীদের মধ্যে। 

মিথ নং ৩: ভুয়া খবরই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী করেছে

২০১৬ সালের নভেম্বরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি কলামে দাবি করা হয় ফেসবুকের ভুয়া তথ্যের কারণেই জয় পেয়েছে ট্রাম্প। এছাড়া ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনও দাবি করা হয়, ভুয়া খবরের কাধে চড়ে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। 

এই দাবি পুরাপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়। উক্ত গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যারা ২০১২ সালে ওবামাদের সমর্থন করেছে, তারা ২০১৬তে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ভুয়া খবরে বিভ্রান্ত হয়ে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে। আবার হিলারির বিরুদ্ধে এমন কোনো ভুয়া খবর ছড়ালে ট্রাম্পের সমর্থকদের পক্ষেই যেত, কিন্তু উক্ত গবেষণায় ট্রাম্পের সমর্থকরা হিলারির বিরুদ্ধে এমন কোনো (ভুয়া) খবরের খোজ পান নি। 

এছাড়া এখন পর্যন্ত এমন কোনো শক্ত প্রমান কেউ হাজির করতে পারেনি যা দিয়ে বুঝা সম্ভব ট্রাম্প ভুয়া খবরের ক্যাম্পেইন করে জিতেছে। এ ধরণের কঠিন প্রতিযোগিতায় এত সহজেই অপর পক্ষকে সরিয়ে দেয়া যায়না। যদিও আমরা জানি, যেকোনো একটি ভুয়া খবর একসাথে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে পারেনা। এছাড়াই কোনো একজন ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে মানুষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে নেয়। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে একইসাথে সন্দেহ জারি রাখতে হবে। যেমন ২০১৮ সালের একাধিক নির্বাচন নিয়ে আমরা গবেষণা করে দেখেছি, ভুয়া খবর কিছু তথ্যের ব্যাপারে ভোটারকে বিভ্রান্ত করতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তার প্রভাব নিতান্তই কম। 

মিথ নং ৪: ফ্যাক্ট-চেকিং ভুয়া তথ্যের ক্ষেত্রে সমস্যাকে আরো ঘনীভূত করে

নিকোলাস ক্রিস্টফ নামক এক কলামিস্ট নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখেন , ‘ফ্যাক্টচেকিং সে অর্থে সফল নয়”। কারণ প্রশ্ন করতে যেয়ে তিনি বলেন, “কাউকে যখন তার পূর্বানুমানের ব্যাপারে নতুন যাচাইকৃত কোনো তথ্য দেয়া হয়, তখন অনেক সময় সে তার পূর্বানুমানের প্রতি আরো বেশি আস্থাশীল হয়ে যায়”। ইউএসএ টুডেও ২০১৯ সালে একইরকম মতামত প্রদান করেছিল ।

এটি নিতান্তই ব্যক্তিগত মতামত। ফ্যাক্টচেকিং সঠিক তথ্য যাচাই এর ক্ষেত্রে হিতে-বিপরীত হবে কীনা সে ব্যাপারে আমি একটি গবেষণার সহ-গবেষক হিসেবে কাজ করেছি। সেখানে আমরা ৫টি গবেষণার মধ্যে ২টিতে এরকম ব্যাপার ঘটতে দেখেছি এবং সেগুলো ছিল তাদের আদর্শ-সংক্রান্ত পছন্দের ব্যাপার ।

ফলে সঠিক তথ্য জানালে এতে মানুষের হিতে বিপরীত হয় সবসময়ই, এই ধারণাটি অতি সরলীকরণ-কৃত। 

বরং আমাদেরসহ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাক্ট-চেকারদের মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রদানে কাজ হয়। তবে সেটি আবার এমন নয় যে, তারা একেবারে তাদের পছন্দকৃত প্রার্থীর বিরোধীকে ভোট দিয়ে ফেলবে।

মিথ নং ৫ : আমরা এখন ‘পোস্ট-ট্রুথ’ জমানায় আছি

ভুয়া তথ্যের মারাত্মক প্রাদুর্ভাবে অনেককে বলতে শোনা যায়, “আমরা আসলে পোস্ট-ট্রুথ জমানায় চলে এসেছি” । এছাড়াও ২০১৬ সালে রাজনীতিবিজ্ঞানী উইলিয়াম ডেভিস লিখেছেন, “সত্যের মৃত্যু আসন্ন”। ২০১৮ সালে মিচিকো কাকুতানিও তাই জানিয়েছিলেন। 

কিন্তু গুজব এবং ভুয়া তথ্য সবসময়ই রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল। ইহুদী-বিরোধী সেসব উদাহরণ তো আমাদের সামনে আছেই। ফলে এসব ব্যাপারে কোনো রোমাঞ্চে ভোগা ঠিক না। 

এখনো অধিকাংশ লোক কোনটি সত্য এবং কোনটি সত্যের বিকৃতি তা বুঝতে পারে। যেমন, ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি পোলে দেখা গেছে, খুব কম লোকই ট্রাম্পের প্রচারিত তথ্যগুলোতে আস্থা রাখত। মাত্র ২৭ ভাগ লোক মনে করে ট্রাম্প ও তার প্রশাসন করোনাভাইরাস নিয়ে যা বলে তা সত্য। কিন্তু  আমেরিকার সিডিসিসহ আরো যেসব স্বাস্থ্য-উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের উপর আস্থাশীল ৫৭ ভাগ মার্কিনী।

আবার খোদ ট্রাম্প ২২ হাজারের বেশি ভুয়া দাবি করেছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে তার প্রভাব কিন্তু তেমন পড়েনি

তবে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এটি নয় যে বেশিরভাগ লোকে সত্য দেখতে পায় না, বরং সংকট হল, দলান্ধতা যখন স্বচ্ছতাকে ছাপিয়ে যেতে চায়। মার্কিনীরা এখনো নিজের দলের পক্ষের ভুয়া তথ্যগুলোর ব্যাপারে বেশ নরমসরম থাকে।   

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে অনূদিত


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *