
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা কি মাত্র ৯২১০ জন?
Author: BD FactCheck Published: September 7, 2020, 5:33 pm | Updated: September 7, 2020, 5:33 pm
ফেসবুকে একটি পোস্ট ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, আমেরিকার সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন) ‘নিরবে’ একটি তথ্য আপডেট করেছে যে “আমেরিকার মারা যাওয়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৪ জনের মধ্যে মাত্র ৬% করোনায় মারা গেছে” (যদিও ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি)। এবং সেই পোস্টের মতে, বাকি ৯৪% অন্যান্য রোগে মারা গেছে। ফলে সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা গেছে মাত্র ৯২১০ জন।
এরকম পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
মূলত এসব পোস্টে করা দাবিটি ভুয়া।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে ৯২১০ জন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের অন্য কোনো রোগ ছিলো না। এবং বাকি যারা করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মারা গেছে তারা মৃত্যুর সময় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য এক বা একাধিক রোগে ভুগছিলেন।
ফলে যারা ( মোট মৃতের ৯৪ শতাংশ) করোনা ভাইরাসের সাথে আরও একাধিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন তাদের মৃত্যুর কারণ ‘করোনা ছিলো না’ এটা বলা সুযোগ নেই। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আগের রোগগুলো আরো বেড়ে যায়। এবং উভয়ের সম্মিলিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়।
ফেসবুকে ছড়ানো পোস্টের সাথে সিডিসির একটি সত্য স্ক্রিনশটও দেখা যাচ্ছে যেটি মূলত সিডিসির করোনা সংক্রান্ত তথ্যের বিস্তারিত ড্যাটাসেট। সেখানেও তিন নাম্বার টেবিলের শুরুতে লেখা আছে, “মোট মৃত্যুর ৬% শুধুমাত্র করোনায় মারা গেছে”। এর মানে এই না যে, বাকি ৯৪% রোগীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনা ভাইরাস অনুপস্থিত।
ঠিক তার পরেই একেবারে বামের কলামের শিরোনাম হচ্ছে, “মৃত্যু সনদে করোনা লেখা রোগীদের অন্যান্য রোগ”। সেখানে করোনার কারণে রোগীদের অন্যান্য কী জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে তার তালিকা দেখা যাচ্ছে। যেমন, শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হওয়া, নিউমোনিয়া। এছাড়া আগে থেকে রোগীরা কিছু রোগে আক্রান্ত ছিল যেমন ডায়াবেটিস ও শারীরিক স্থুলতা।
এ ব্যাপারে রয়টার্স থেকে সিডিসি’র জাতীয় স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান বিভাগের মৃত্যু পরিসংখ্যান শাখায় যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে বলা হয়, ডাক্তার বা স্বাস্থ্য পরীক্ষক মূলত যেই রোগে বা কারণে মারা গেছে তার উপর ভিত্তি করে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মৃত্যুসনদ দিয়ে থাকেন। মূলত “যেই রোগ বা ঘটনার কারণে” শেষমেশ তার মৃত্যু হয়, তাই “সনদে আসল মৃত্যু-কারণ” হিসেবে উল্লেখ করেন তারা”।
তারা করোনা সংক্রান্ত মৃত্যুসনদের ব্যাপারেও বিস্তারিত বলেন। সেটা হল মৃতদের মধ্যে ৯৪% এর করোনার সাথে অন্যান্য শারিরিক জটিলতা ছিল। বাকি ৬% শুধুমাত্র করোনাতেই মৃত্যুবরণ করেছে। অন্য কোনো রোগ তাদের ছিলো না।
স্ট্যানফোর্ড ক্রাউন ক্লিনিকের মেডিকেল পরিচালক ডা. মাজা আরতেন্দি ইমেইলে রয়টার্সকে জানান, “এই ব্যাপারটি অবাক করার মত না। করোনায় আক্রান্তদের যদি পাশাপাশি অন্যান্য জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন কিংবা স্থুলতা থাকে তাদের বেশি অসুস্থ্য এবং মৃত্যুঝুকি বেশি থাকে। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হলে অনেক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলে যেমন ফুসফুস। ফলে করোনায় আক্রান্ত রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
ক্যানসাসের সেন্ট লুক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের ডা. মারক লারসেন জানান, মৃত্যুসনদ দেওয়ার আগে ডাক্তাররা মুলত প্রাথমিক কারণগুলোর পাশপাশি অন্যান্য কারণগুলোও লিখে থাকেন।
তিনি তুলনা দিতে গিয়ে বলেন, কেউ যদি গুলিতে মরে তার মৃত্যুসনদে হয়ত লেখবে, “গুলির আঘাতের সাথে অক্সিজেনের অভাব (হেমোরাজিক শক) এবং লিভারে গভীর ক্ষত”, সাথে হয়ত লোকটির আশ্রয়হীনতা। ঠিক সেভাবেই কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে করোনার সাথে সাথে অন্যান্য রোগ যেমন নিউমোনিয়া বা জটিল শ্বাস প্রশ্বাসের সংকট লেখা থাকবে, কিংবা ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশোন।
এছাড়া ১ সেপ্টেম্বর, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ এলার্জি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ডা. এন্থনি ফোউচি উক্ত দাবির পক্ষে ব্যখ্যা করেন।
দেখুন এখানে।
তিনি দাবি করেন, ১ লাখ ৮০ হাজার “সত্যিই করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে”।
সিদ্ধান্ত: তাই এটা স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রে মহামারির সময়ে মৃতদের মাত্র ৬% করোনায় মৃত্যু হয়েছে দাবিটি সত্য নয়। বরং বাকি ৯৪% করোনা-সহ অন্যান্য রোগে বা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
রিপোর্টটি রয়টার্সের এই রিপোর্ট অনুসরণে তৈরি।