
রাশিয়ার ভ্যাকসিন: কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Author: BD FactCheck Published: August 15, 2020, 4:20 pm | Updated: August 15, 2020, 4:20 pm
কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন অনিশ্চয়তার মধ্যেই গত মঙ্গলবার বিশ্বের প্রথম করোনা ভ্যাকসিন পুরোপুরি প্রস্তুত করার দাবী করেছে রাশিয়া। বর্তমানে বিশ্বে ছয়টি ভ্যাকসিন মানবপরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। রাশিয়ায় অনুমোদন ভ্যাকসিনটি যৌথভাবে তৈরি করেছে দেশটির গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ভ্যাকসিনটি এখনো মানব ট্রায়ালের প্রথম ধাপে রয়েছে। যদিও রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। সংস্থাটি বলছে, ভ্যাকসিনাইজেশন প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয় তারা।

এ ব্যাপারে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত “ভ্যাক্সিনের জন্যে রাশিয়ার প্রতিযোগিতায় উদ্বেগ বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া দাবি করছে তারা বিশ্বে প্রথম কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন অনুমোদন দিচ্ছে। অক্টোবরের প্রথম দিকে তারা জনসাধারন পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ভ্যাকসিন প্রদানের পরিকল্পনা করেছে। অথচ এখনো তারা তাদের ক্লিনিকাল ট্রায়াল বাস্তবায়ন করেনি বলে বিজ্ঞানীরা উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন। এই প্রতিবেদনে আমেরিকার জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য আইন বিশেষজ্ঞ লরেন্স গোস্টিন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “আমি চিন্তিত যে রাশিয়া তার ভ্যাক্সিন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত রাস্তায় যাচ্ছে যেটা শুধু অকার্যকর নয়, অনিরাপদও।” তিনি বলেন, “এভাবে হয়না, আগে ট্রায়াল করে নিতে হবে। এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাতেও এসেছে। তাদের খবরের শিরোনামে বলা হয়েছে, “নানা সন্দেহের মধ্যেই রাশিয়ায় ‘প্রথম’ ভ্যাক্সিনের অনুমোদন।” আল জাজিরার খবরে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রাশিয়াকে একটি নিরাপদ ভ্যাক্সিন আনতে প্রয়োজনীয় সকল ধাপ নিশ্চিত করতে বলেছে। এছাড়া সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেন, রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কিছু জানানো হয়নি।
এছাড়াও ওয়াশিংটন পোস্ট এ ব্যাপারে একাধিক খবর প্রকাশ করে। তার মধ্যে একটির শিরোনাম ছিল, “রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন স্পুটনিক ফাইভ উন্মোচনঃ ভ্যাকসিন তৈরীর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পরীক্ষা না করেই বিরাট সাফল্যের দাবী।” উক্ত খবরে সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিফেন মরিসন বলেন, “রাশিয়া নিয়ম বদলে দিচ্ছে, তারা শর্টকাট রাস্তায় যাচ্ছে”। এছাড়াও তিনি দাবি করেন, ”এটি একটি বড় ঘটনা এবং পুতিনের মাধ্যমেই শুরু হল। আসলে তার একটি জয় দরকার।”
আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ এর পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, “আমি আশা করি চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাক্সিন অন্যদের প্রদানের আগে তারা যথাযথ পরীক্ষা করে নিবে। কেননা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগেই ভ্যাক্সিন প্রস্তুতের ঘোষণায় মারাত্মক সমস্যা রয়েছে।” এছাড়া ওয়াশিংটন পোষ্টের আরেকটি খবরে বলা হয়, এই ভ্যাক্সিন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। “রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের অনুমোদনে বিজ্ঞানীরা উৎকণ্ঠিত” শিরোনামে উক্ত খবরে সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিওর রিসার্চ ফেলো ডঃ মাইকেল হেড জানান, “এই ভ্যাকসিনটি কার্যকর হবে কিনা, কাজ করবে নাকি করবে না এটা সত্যিকারভাবে মূল্যায়ন করার সময় এখনো আসেনি।”
গার্ডিয়ান তাদের খবরে প্রশ্নবোধক চিহ্নে শিরোনাম করেছে ”রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিনঃ এটি কি কাজ করবে, এবং নিরাপদ হিবে?” নিউ হাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিয়ার উপর বিশেষজ্ঞ ম্যাথিউ শ্মিট আশংকা করেন যে, যদি কোন ভ্যাক্সিনের মান খারাপ হয়, তাহলে সেটি তো উপকারে আসেই না বরং মানুষের মধ্যে ভ্যাক্সিনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে। “রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের সমস্যা হল, এটি যেভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে জনগনের আস্থার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ফলে সেটি কাজ করলেও বাকী বিশ্বে অনেকে সেটি গ্রহন করতে চাইবে না। এছাড়া ভ্যাক্সিন-বিরোধী প্রচারনাকে আরো শক্ত করবে” বলে মন্তব্য উক্ত বিশেষজ্ঞের।
এছাড়া রাশিয়ার ভ্যাক্সিন ইস্যুতে গার্ডিয়ানের আরেকটি খবরে একইভাবে যথাযথ উপায় না মানায় উদ্বেগ দেখানো হয়। সেখানে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কম্পিউটেশনাল সিস্টেম বায়লোজির অধ্যাপক ফ্রাঙ্কওইস বেলোক্স রাশিয়ার দাবিকে “লাগামহীন এবং বোকা” বলে দাবি করেন।
উক্ত খবরে মার্কিন স্বাস্থ্য এবং মানবসেবা বিভাগের সেক্রেটারি এলেক্স এজারের তাইওয়ান সফরকালের বক্তব্যে বলা হয়েছে, “এখানে প্রথম হওয়ার কিছু নেই। আমাদের নিরাপদ ভ্যাক্সিন দরকার, মার্কিনিদের জন্য যেমন, তেমনি বিশ্বের মানুষের জন্য”। তিনি ডিসেম্বর নাগাদ আমেরিকার ভ্যাক্সিন আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। চীনের প্রভাবশালী মিডিয়া গ্লোবাল টাইমস রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের খবরটিকে বেশ গুরুত্বের সাথেই প্রকাশ করেছে। তাদের খবরের শিরোনামঃ “আগামি শীতে করোনার প্রকোপের আশঙ্কার মধ্যে রাশিয়ার প্রথম ভ্যাক্সিনের অনুমোদন”।
খবরটির শুরুতে বলা হয়, রাশিয়ার উক্ত ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য বা ট্রায়ালের খবর না পাওয়ায় বিষয়টিকে উদ্বেগের সাথে দেখছে পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা। যদিও রাশিয়া সিএনএনকে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ বলেছিল, তারা তাদের সকল বৈজ্ঞানিক তথ্য রিভিউ এর জন্যে উন্মুক্ত করবে এবং তা আগস্টের শুরুতে প্রকাশ করবে।
বেইজিং-ভিত্তিক একজন ইমিউনোলিজিস্ট দাবি করেন, আগামি শীতে রাশিয়াতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে হয়তো দ্রুত এই ভ্যাক্সিনের চেষ্টা চলছে।এছাড়া সাউথ চায়না পোস্ট ও রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের খবর প্রকাশ করেছে। তবে তারাও আল জাজিরার মত রাশিয়ার “প্রথম ভ্যাক্সিন” এর দাবিকে কোট-আনকোট করে প্রকাশ করেছে। তাদের শিরোনাম ছিল, “বিশ্বের ‘প্রথম’ ভ্যাক্সিন অনুমোদন দিল রাশিয়া, পুতিনের দাবি।” উক্ত খবরে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির অধ্যাপক ড্যানি অল্টমেন বলেন, “রাশিয়ার ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে আমরা জানতে পারছি কম”।
এছাড়া কোন ভ্যাক্সিনে যদি সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে সেটি বর্তমান সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে বলে মনে করেন অল্টমেন।উল্লেখ্য, রাশিয়ার ভ্যাক্সিন একটি ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাক্সিন। যার মানে হচ্ছে উক্ত ভ্যাক্সিন আরেকটি ভাইরাসকে ব্যাবহার করে কোষে ডিএনএ বহণ করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ইমিউনিটি প্রদান করবে।