
সংবাদ বিশ্লেষণ: ভুলে ভরা বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদন
Author: Zahed Arman Published: July 8, 2020, 10:28 am | Updated: July 8, 2020, 10:35 am
বাংলাদেশ প্রতিদিন গতকাল ৭ জুলাই “করোনাভাইরাসের আতঙ্ক: ৭৮০০ বাংলাদেশিসহ সারা বিশ্বের ১১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ” শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এই সংবাদে উল্লেখিত অধিকাংশ তথ্যই ভুল যা পাঠককে বিভ্রান্ত করছে। আমি এই সংবাদটি বিশ্লেষণ করে দেখাবো এতে কী কী অসঙ্গতি রয়েছে।
এক।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সংবাদ সূচনায় দাবি করা হচ্ছে, “করোনাভাইরাসের আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিসমূহে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৮০০ ছাত্র-ছাত্রীসহ সারাবিশ্বের ১১ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে অবিলম্বে নিজ নিজ দেশে চলে যাবার নির্দেশ জারি হয়েছে।” যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর উদ্ধৃতি দিয়ে এই দাবি করে পত্রিকাটি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সংবাদে আরও দাবি করা হচ্ছে, “ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরতরা এ নির্দেশ অমান্য করলে তাদেরকে গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে হবে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী গ্রেফতারের পর সকলকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।”

আদতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর ঘোষণায় “অবিলম্বে নিজ নিজ দেশে চলে যাবার নির্দেশ” কিংবা “নির্দেশ অমান্য করলে তাদেরকে গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে হবে” ধরণের কোনো বিষয় ছিল না। দেখুন ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি:
ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে,
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ফল সেমিস্টার থেকে পুরোপুরি অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাবে সেসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরে যেতে হতে পারে অথবা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন-পারসন ক্লাস হয় সেগুলোতে ট্রান্সফার করতে হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর সামনের সেমিস্টারের জন্য সম্পূর্ণ অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসার জন্য কোনো বিদেশী শিক্ষার্থীকে ভিসা দেবে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনও তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিবে না।
উল্লেখ্য, বিদেশী শিক্ষার্থীরা এক সেমিস্টারে তিনটি কোর্সের মধ্যে একটি কোর্স (তিন ক্রেডিট) অনলাইনে নিতে পারবে। যারা এর বেশি কোর্স অনলাইনে নিবে তাদের জন্য এই ঘোষণাটি কার্যকর হবে।
এখানে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বাংলাদেশের ৭ হাজার ৮০০ ছাত্র-ছাত্রীসহ সারাবিশ্বের ১১ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে অবিলম্বে নিজ নিজ দেশে চলে যাবার নির্দেশ জারি করে নি।
দুই।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সংবাদে ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে, ” করোনার কারণে প্রতিটি ইউনিভার্সিটির ক্লাস অনলাইনে করা হবে।” অথচ ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর ঘোষণায় “প্রতিটি ইউনিভার্সিটির ক্লাস অনলাইনে করা হবে” এমন কিছুই বলা হয়নি। এমনকি তারা এই ধরণের ঘোষণা দিতে পারে না। তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইন-পারসন নাকি অনলাইন পদ্ধতিতে যাবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ১০ দিনের মধ্যে স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (এসইভিআইএস) এ যাতে তা হালনাগাদ করা হয়।
তিন।
এর পরের প্যারায় বলা হয়েছে, “চলতি সপ্তাহে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ নিয়ে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে মিলিত হয়েছেন। করোনার উৎপাত অব্যাহত থাকলে ক্যাম্পাসে কারোর উপস্থিতি স্বাস্থ্যবিধির পরিপূরক হবে না বলেও এসব মিটিংয়ে অভিমত পোষণ করা হয়েছে।” প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি কখন এই ভার্চুয়াল মিটিং অনুষ্ঠিত হয় কিংবা কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা কি আমেরিকার ৫০টি রাজ্যে থেকেই অংশগ্রহণ করেছিলেন? কারণ আমেরিকার প্রত্যেকটি রাজ্যে আলাদা সরকার আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কথাও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শুনতে হয়। তাই আমেরিকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভার্চূয়াল মিটিং হওয়ার কথা এখানে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
চার।
এছাড়া প্রতিবেদনটিতে আরও বেশ কিছু তথ্যের অসঙ্গতি রয়েছে। যেমনটি বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সংবাদে দাবি করা হচ্ছে, “গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার তাণ্ডব শুরুর পর থেকেই সবকিছু লকডাউনে গেছে।” সত্যি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি রাজ্য – আরকানসা, আইওয়া, নেব্রাসকা, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, ইউটাহ, এবং উইমং মার্চ-এপ্রিলে লক ডাউন করেনি। এমনকি এসব রাজ্যের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই খোলা ছিলো।
পাঁচ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সংবাদে দাবি করা হচ্ছে, “সেপ্টেম্বরে শুরুতে নতুন শিক্ষাবর্ষেও ক্লাসে উপস্থিত হবার মতো পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে বলে কেউই মনে করছেন না।” কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমেরিকার অধিকাংশ রাজ্যে ফল সেমিস্টার শুরু হয় আগস্ট মাসের মাঝামাঝি এবং শেষ সপ্তাহে; সেপ্টেম্বরে নয়।