
সামাজিক মাধ্যমগুলো কী মার্কিন নির্বাচনে ভুয়া খবর মোকাবেলা করতে পেরেছিল?
Author: BD FactCheck Published: November 10, 2020, 7:46 pm | Updated: November 16, 2020, 2:53 pm
গত ৩ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনকালে ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব নির্বাচন-সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য কমিয়ে আনার কথা দিয়েছিল। বিশেষ করে তারা ব্যক্তি-বিশেষের নির্বাচনকে ‘ভুয়া’ বলে দাবি করা এবং ঘোষণার আগেই নিজেকে ‘নির্বাচিত’ দাবি করা পোস্টগুলো যাচাই করেছে। কিছু ঘটনা বাদ দিলে তারা অবশ্য সেগুলো করে দেখিয়েছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, তাদের এসব উদ্যোগ আসলে ২০২০ এর মার্কিন নির্বাচনে মূল সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারেনি।
নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যানন ম্যাকগ্রেরর জানান, “আমরা যা আশা করেছিলাম, অতটুকুই তারা করে দেখিয়েছে; যা যথেস্ট নয়। বিশেষ করে ফেসবুকের ক্ষেত্রে”।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সমর্থকদের উৎসাহিত করতে ঘোষণা দিলেন যে তিনি নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করবেন। এছাড়া তিনি ফেসবুক এবং টুইটারে বিভ্রান্তিকর নানা দাবি করতে থাকলেন। এর আগেও মাসজুড়ে তিনি মেইল-ইন ভোটিং নিয়ে সন্দেহ জানিয়ে আসছিলেন।
এ ব্যাপারে টেক কোম্পানিগুলো কী করেছে? বেশিরভাগ সময়ে তারা বলবে তারা বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া খবরগুলোকে চিহ্নিত করে ফ্ল্যাগ দিয়েছে। যাতে উক্ত খবরের ব্যাপারে পাঠককে সতর্ক করা যায়। এছাড়া টুইটারেও পাঠককে ‘ওয়ার্নিং’ সরিয়ে পোস্ট দেখতে হয়, শেয়ারেও আনা হয় সীমাবদ্ধতা।
যেমন টিকটকের ব্যাপারে জানা যায়, তারা ৪ নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে একাধিক ভুয়া খবর-সম্বলিত ভিডিও সরিয়ে দিয়েছে। ফেসবুক এবং ইউটিউবে দেখা গেছে, তারা পোস্টের সাথে একাধিক বাড়তি তথ্য দিয়ে পাঠককে জ্ঞাত রাখার চেষ্টা করছে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ইউটিউবে দেখা গেছে হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পের বিবৃতিগুলো মূলধারার খবরমাধ্যমসহ সবাই আপলোড করেছে। কিন্তু সেখানে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ একটি “ইনফরমেশন প্যানেল” যুক্ত করেছে যেখানে নির্বাচন-সংক্রান্ত তথ্যাদি দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু ম্যাকগ্রেরর অভিযোগ করেন, “প্রেসিডেন্টের বেলায় তারা কেবল একটি ছোট ফ্ল্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু অন্য রাজনীতিবিদদের বেলায় নিচে তারা বাড়তি তথ্য যুক্ত করছে” বলে প্রেসিডেন্ট এর বেলায় ভুল তথ্যগুলোও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে অথচ তাদের দায়িত্ব ছিল মিথ্যা তথ্যের প্রচার কমিয়ে আনা।
এছাড়া “কোনো ভুল তথ্য শেয়ার করা গেলে অন্যরা তো তা মেনে নিবেই” বলে দাবি তার।
ট্রাম্প শুধু না, নর্থ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর থম টিলিসের বেলায়ও টুইটারে ফ্লাগ দেয়া হয়। সেখানে তিনি মূলত ফলাফলের আগেই নিজেকে আবার ‘বিজয়ী’ বলে দাবি করেন। উইসকনসিনের একজন ডেমোক্রেটের বেলাতেও তাই হয়েছে।
৪ নভেম্বর ট্রাম্পের একটি টুইটে দাবি করা হয়, রাত বাড়ার এবং ব্যালটের হিসেবের সাথে সাথে কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যের খবর “অদ্ভুতভাবে হারিয়ে যাচ্ছে”। টুইটার সেটিতেও ফ্ল্যাগ বসিয়ে দেয়। এছাড়া কিছু পোস্টে টুইটার ‘ওয়ার্নিং’ বসিয়ে দেয়, ফলে মূল পোস্টে ঢুকতে সেটি সামনে চলে আসে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর, মার্ক জাকারবার্গ জানান, যদি কোন নির্বাচন-প্রার্থী ফলাফলের অফিশিয়াল ঘোষণা হওয়ার আগে নিজেকে কোনভাবে জয়ী ঘোষণা করে, তাহলে তার উক্ত পোস্টে ফেসবুক ফ্লাগ বসিয়ে দিবে।
কিন্তু ফেসবুকের এই কার্যক্রম নির্দিষ্ট কিছু ঘোষিত প্রার্থীদের বেলায় বজায় ছিল। এছাড়া ফলাফলের আগেই নিজেকে জয়ী ঘোষণা করার পোস্টগুলোতে খুব সাধারণ ফ্ল্যাগ দেয়া হয় যেখানে ভোটের সাধারণ তথ্যগুলো কেবল পাওয়া যাচ্ছিল। বরং উক্ত ফ্ল্যাগটি হওয়া উচিত ছিল ভুয়া কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্যের।তবে এক্ষেত্রে টুইটার কিছুটা সক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেছে। তাদের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী তারা ‘ভুয়া’ বা ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত পোস্টগুলোতে কেবল ফ্ল্যাগ নয়, প্রচারেও সীমাবদ্ধতা আনবে।
টুইটার এবং ফেসবুকের পদক্ষেপ ঠিক ধারাতেই ছিল, কিন্তু অতটা কার্যকর ছিল না।, বিশেষ করে টুইটারের ক্ষেত্রে” বলে মনে করেন, জেনিফার গ্রিগেল যিনি একজন অধ্যাপক এবং মিডিয়া এক্সপার্ট।
তিনি বলেন, “কারণ বিখ্যাত ব্যক্তিরা টুইটারে একটি পোস্ট দেয়ামাত্রই সেটি ছড়িয়ে পড়ে”। হয়ত টুইটার একটি বিভ্রান্তিকর পোস্টে ফ্ল্যাগ দিল, কিন্তু ততক্ষনে সেটি হাজার-লাখ মানুষের কাছে পৌছে গেছে। যেমন ট্রাম্পের পেনসিলভানিয়ার ভোট নিয়ে তার একটি ভুয়া টুইট ১৫ মিনিট পর ফ্ল্যাগ পায়।
“কোনো পোস্ট করার আগে সেটিকে নীতির মধ্যে আনা না গেলে এসব নীতি কাজে আসবেনা টুইটারের” বলে দাবি গ্রিগেলের।
গ্রিগেল আরো দাবি করেন, কিছু ব্যক্তি বিশেষ করে ট্রাম্পের মত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, টুইটারে এমন নীতি থাকা উচিত যে তাদের পোস্টগুলো আগে যাচাই করে তারপর প্রকাশিত হতে পারবে। এছাড়া প্রকাশিত হওয়ার সাথে সেখানে দরকারি ফ্ল্যাগ যুক্ত করা যেতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের মত বড় বড় ঘটনায়।
তাই গ্রিগেল মনে করেন, “মূল কথা হল, সামাজিক মাধ্যমগুলোর ভুয়া তথ্য নিয়ন্ত্রণের নীতিগুলোতে ভাল কাজের চেষ্টা ছিল। কিন্তু দিনশেষে সেই নীতিগুলো খুব বেশি কার্যকর হয়নি”
The Star অবলম্বনে