
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে মার্কিন নির্বাচনে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি
Author: BD FactCheck Published: November 5, 2020, 11:21 pm | Updated: November 5, 2020, 11:21 pm
নির্বাচনের পর দিন বুধবার সকালে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জয়ের ঘোষণা দেন তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আমেরিকানদের সামনে কোন কঠিন সময়।
প্রেসিডেন্সির সাথে তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইন গুলিয়ে ফেলে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক বার্তায় বলেন, ”এটা আমেরিকানদের সাথে জালিয়তি। আমরা এই নির্বাচন জয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আসলে আমরা নির্বাচন জিতে গেছি।”
তার বিজয়ী হওয়ার এই দাবিটি মিথ্যা- কারণ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনের দুই দিন পরও এখনো ভোট গণনা চলছে। এটা মূলত গত চার বছর ধরে ট্রাম্পের চালিয়ে যাওয়া ভুয়া তথ্য প্রচারাভিযানের অংশবিশেষ। তার কৌশল হচ্ছে মেইলে পাঠানো ভোটকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করে যাওয়া। কারণ নির্বাচনের আগে থেকেই ডেমোক্রেটরা স্বশরীরে হাজির হয়ে ভোট দেয়ার চেয়ে ইমেইলে ভোট দিতে মানুষকে উৎসাহিত করছিলো। ফলে তাদের পক্ষের ভোট বেশিরভাগই ইমেইলে পড়েছে।
টুইটার গতকাল বুধবার ট্রাম্পের পাঁচটি টুইটের মধ্যে তিনটিকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর’ বলে টুইটগুলোতে সতর্কতা লেবেল সেঁটে দিয়েছে। একটি টুইটে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ”মিশিগান ও অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মতো পেনসিলভানিয়াতেও তারা ৫ লাখ ভোট সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে।”
টুইটার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন টিম ও পুত্র এরিক ট্রাম্পসহ অনেক ট্রাম্প সমর্থকের টুইটে সতর্কতা লেবেল সংযুক্ত করেছে যেগুলোতে দাবী করা হচ্ছিল যে, নির্ধারিত সময়ের পরও ভোট নেয়া হচ্ছে। এসব টুইট থেকে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার ঘোষণাও দেয়া হচ্ছিল। যদিও পেনসিলভানিয়ার চূড়ান্ত ফলাফল এখনো আসেনি।
ইমেইল ভোট নিয়ে ট্রাম্পের ভিত্তিহীন আশঙ্কা প্রকাশ নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে একটি ক্যাম্পেইন ভিডিওতে দেখা যায় ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ জাল ব্যালট যোগ করার আশঙ্কা করছেন। যদিও এরকম কোন প্রমাণ তখন ছিলোনা, এবং এখনো নেই।
নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে ট্রাম্প এই নির্বাচনে হারলে তা মেনে না নেয়ার কথাও জানান যা বর্তমানে বাস্তব হয়ে উঠছে।
ডেমোক্র্যাট শিবির থেকেও ভুয়া তথ্যের প্রচার চালানো হয়েছে। তবে এই পক্ষের শীর্ষস্থানীয় যারা সক্রিয়ভাবে ডেমোক্র্যাট নির্বাচনী অভিযানে শরিক ছিলেন তাদের পক্ষ থেকে ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ‘বাইডেন ২৭০ টি ইলেক্টোরাল ভোট জিতেছেন‘ সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নীরা টান্ডেন এর এরকম একটি টুইটে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলে সতর্কতা লেবেল সংযুক্ত করা হয়েছে।
কিছু অঙ্গরাজ্যের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার আগেই তা জানিয়ে টুইট করার কারণেও অনেকের টুইটে সতর্কতা লেবেল দেয়া হয়েছে। ফক্স নিউজের খবরের উপর ভিত্তি করে অনেক রাজনৈতিক রিপোর্টার যখন অ্যারিজোনায় বাইডেনকে জয়ী বলে টুইট করছিলেন তখন এটা আনুষ্ঠানিক ফল নয় বলে বেশকিছু টুইট লেবেল করা হয়।
ভুয়া তথ্য ছড়াতে সক্রিয় এমন একজন প্রেসিডেন্টকে কিভাবে সামাল দেয়া হবে এই ব্যাপারে ফেসবুক ও টুইটারের পলিসি ভিন্ন ভিন্ন। নির্বাচনী নিয়ম ভঙ্গকরী টুইটগুলোতে টুইটার ‘বিভ্রান্তিকর’ লিখে ট্যাগ সংযুক্ত করে দেয় এবং টুইটগুলোর রিপ্লাই, রিটুইট ও লাইক কমিয়ে দিয়ে সেটাকে ভাইরাল হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে।
একইসাথে টুইটার একবছর আগেই নির্বাচনী বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে ফেসবুক তা বন্ধ করেনি, ভোট গ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পর কেবল বন্ধ করা হয়েছে।
নির্বাচনী নিয়ম ভঙ্গ করে এরকম পোস্টের জন্য ফেসবুকের নিজস্ব কিছু ট্যাগ রয়েছে। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার ঘোষণা সামাল দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ‘এখনো ভোট গণনা চলছে’ মর্মে একটি মেসেজ সংযুক্ত করে রেখেছে।
ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইউটিউব ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে। বুধবার সকালে ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা দেয়ার পর অনেক নিউজ আউটলেট সেটা নিয়েও খবর প্রকাশ করেছে যা উদ্বেগের কারণ।
ফেসবুক ও টুইটার যদিও নির্বাচনের রাতের জন্য বিশেষ পলিসি নিয়েছে, তবে এই দুইটা মাধ্যমকে আগামী কয়েকদিন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে কারণ ক্রমেই নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও প্রতিকূলতার শঙ্কা প্রবল হচ্ছে।