ফিচারড নিউজ

ফিচারড নিউজ

January 4, 2021, 11:38 am

Updated: January 4, 2021, 11:38 am

২০২০ সালে বড় টেক কোম্পানীগুলো ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে যেভাবে ব্যর্থ হয়

Author: BD FactCheck Published: January 4, 2021, 11:38 am | Updated: January 4, 2021, 11:38 am

২০২০ এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় মিম! ২০২০ এর সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিও! ২০২০ এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় হ্যাশট্যাগ!

ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবের বিদায়ী বছরের পর্যালোচনামূলক আলোচনায় এরকম বিভিন্ন টপিক থাকলেও সবচেয়ে বড় বিষয়টাই বাদ পড়ে গেছে। আর সেটা হলো ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে এই টেক জায়ান্টদের ব্যর্থতা।  

কিউআনন ষড়যন্ত্র তত্ত্বও মূলধারার ব্যাপক সহযোগীতা পেয়েছে। কর্মকর্তাদের একইসাথে ভয়াবহ দাবানল আবার ফ্যাসিজম বিরোধীদের নিয়ে ছড়ানো ভুয়া খবরও মোকাবেলা করতে হয়েছে। 

আর সেই সাথে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ে সাঙ্ঘাতিকরকম ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি তো ছিলই। 

এর ফলাফলও ছিল ভয়াবহ। তবে ২০২১ সালও যে এরকমই হতে হবে তা নয়।

ভুয়া খবরের মহামারি:

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বুঝতে পারে যে তাদের তৈরী প্রযুক্তি অপব্যবহারকারীদের হাতে পড়লে কি হতে পারে। তারপরও কোম্পানীগুলো কোন পদক্ষেপ নিতে চায়নি, যদিও ক্ষতিকর কিছু ব্যবহারকারীকে ব্যান করা হয়েছিল। 

অবশ্য এবছর ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে গৃহীত কিছু নীতির সময় দেখে মনে হয় বেশীরভাগ  সামাজিক মাধ্যমই ২০২০ এর মার্কিন নির্বাচনের আগেই কিছু একটা করার মনস্থির করে রেখেছিল। 

মার্চে এসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি আমেরিকায়ও আঘাত হানে করোনা মহামারী। এসময় দেশটিতে মাস্ক বিরোধী বিক্ষোভও হয়। কিছু মানুষ ব্লিচিং পাউডার খেয়েছে, আবার কেউ কেউ করোনাভাইরাস যে বাস্তব এটাও বিশ্বাস করেন নি।

কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক গীতা জোহর বলেন, চারিদিকে ভাইরাসটি সম্পর্কে প্রচুর দ্বান্দ্বিক তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল যার ফলে মানুষ নিজেরাই ব্যাপারটি নিয়ে সক্রিয় ছিল। কি ঘটছে এটা বোঝানোর জন্য মানুষ যা পাচ্ছিল তাই শেয়ার করছিল। 

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় গীতা জোহর দেখিয়েছেন যে যারা সবসময় কিংবা মহামারীর মত কোন অপ্রত্যাশিত কোন সময়ে একাকীত্ব ও অনিশ্চয়তায় ভোগেন তাদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যেকোন কিছু ছড়ানোর প্রবণতা বেশী। 

তিনি জানান, মানুষ সাধারণত সত্য ও অসত্যের পার্থক্য করতে জানে, তারপরও সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যেকোন কিছু কারণ ছাড়াই শেয়ার করতে থাকে। 

তার সাথে ছিল অনেক ট্রল, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও রাজনীতিবীদ যারা ভীত-সন্ত্রস্ত ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগা মানুষকে ভুয়া তথ্য দিয়ে দিশেহারা বানিয়ে ফেলছিল। 

সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইটের সিইও ইমরান আহমেদ বলেন, ”কোভিড নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোকারীদের কাজ ছিল একটাই, শুধু সন্দেহ তৈরী করা। তাদের কৌশল ছিল ‘আবর্জনা দিয়ে ভরপুর করা’ নীতি। আমরা এখন সেটাই দেখতে পাচ্ছি। অপপ্রচারকারীরা ছাইপাঁশ দিয়ে সামাজিক মাধ্যম ভরপুর করে ফেলছে।’’ 

অলাভজনক ক্রিয়াশীল প্রতিষ্ঠান আভাজের ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর ফাদি কুরান বলেন, ”ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্টিভ ব্যানন নেটওয়ার্কের অন্যান্যরা বছরের পর বছর ধরে ভোট জালিয়াতি নিয়ে ভুয়া দাবি করে আসছেন।”

ফেসবুক এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় থেকে ট্রাম্প, ব্যানন এবং অন্যান্যদের যা ইচ্ছা তা ছড়াতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছে। 

ভুল পদক্ষেপ:

এবছর বড় টেক কোম্পানীগুলো ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। 

ফেসবুক নির্বাচন পূর্ববর্তী কয়েক সপ্তাহ রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সীমিত করে দিয়েছিল। যদিও ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন টিম এই নীতির ফাঁক গলিয়েও নতুন পথ বের করে নিয়েছে। 

অনেক ভুয়া তথ্যে ফেসবুক ফ্যাক্ট-চেক লেবেলও সংযুক্ত করেছে। ইমরান আহমদের মতে, ফেসবুকের এই নীতিটি ছিল ‘বিপর্যয়কর’। তার মতে, ”সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো এটাই চায়। তারা চায় এই প্ল্যাটফর্মেই বিতর্ক চলুক।”

কারণ কোন ব্যবহারকারী যখন কোন কন্টেন্টে সময় দেন, সত্য বা ভুয়া যাই হোক, তখন তাকে বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ তত বেশী। 

ইমরানের মতে, ”আমরা জানি ভুয়া তথ্য কারা ছড়ায় এবং এটাও জানি যে এগুলো সত্য নয়। তারপরও সামাজিক মাধ্যমগুলোর জন্য এটা একটা লাভজনক বাজার।”

প্রতিদিন ২ বিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারীর সাইট ফেসবুকের নীতিগত ফাঁক গলিয়ে অনেক কন্টেন্ট থেকে যায়। বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের প্রায় ১৫ হাজার থার্ড পার্টি কন্টেন্ট মডারেটর রয়েছে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ফেসবুকের এই জনবল বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা উচিত যারা ঘরে বসে কাজ করবে। 

এমআইটির এক গবেষণায় দেখা যায় যে ভুয়া তথ্যে ফেসবুক লেবেল সংযুক্ত করেনি সেটা ব্যবহারকারীরা সত্য বলে ধরে নেন।

ফাদি কুরানের মতে, ভুয়া তথ্য ফ্যাক্টচেক করার পর ফেসবুক ‌ফ্যাক্টচেক করার আগে যিনি কন্টেন্টটি দেখেছেন তার কাছে কোন সংশোধনী পাঠায় না। 

পদক্ষেপের পরিধি ও মাত্রা:

সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভুয়া তথ্যের কারণে ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব ও টুইটারে ৯১২ টি পোস্ট ফ্ল্যাগ করা হয়েছে কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ২০ টি সরানো হয়েছে। 

ইমরান আহমদের মতে, সামাজিক মাধ্যমগুলো বিশ্বের মানুষকে বোঝাতে চায় যে তারা ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে অনেক কিছু করছে কিন্তু বাস্তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। 

এবছরের অক্টোবরে ফেসবুক কিউআনন কে ব্যান করার মাধ্যমে বড় একটি পদক্ষেপ নেয় যা অনেক মহলে প্রশংসিত হয়।

কিন্তু কিউআনন ২০১৭ থেকে কাজ করছে এবং করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানোর এই সময়ে তাদেরকে আরো আগেই ব্যান করলে ভুয়া তথ্য ছড়ানো অনেক কমে যেত। 

ফাদি কুরানের মতে, ফেসবুক আরো দুই বছর আগে এদেরকে ব্যান করলে ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারী কিউআননের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের গ্রুপ ও পেজে যোগ দিত না। 

২০২১ এবং আগামী দিন:

ভুয়া তথ্যের মহামারী রুখতে সামাজিক মাধ্যমগুলোর সদিচ্ছা থাকতে হবে।

গীতা জোহরের মতে, ”বাছবিচারহীনভাবে ভুয়া তথ্য ছড়ানো মানুষের একটা অভ্যাসে পরিণত কবে যদি না সেগুলোকে মূলেই রুখে দেয়া যায়। সামাজিক মাধ্যমের বিশাল ব্যবহারকারীরা নিজেরা সম্পূর্ণ সচেতন হয়ে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করবেন এটা আমরা আশা করতে পারি না।”

২০২০ সালে যা হওয়ার হয়ে গেছে, কিন্তু ২০২১ নিয়ে কাজ করার এখনি সময়। সামাজিক মাধ্যমগুলোর উচিত ধারাবাহিকভাবে যারা ভুয়া তথ্য ছড়ায় তাদের প্মোট করা বন্ধ করতে নিজস্ব অ্যালগোরিদম পরিবর্তন করা।         

Mashable অবলম্বনে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *