
ভোটগ্রহণের পর ছড়িয়েছে তিন ধরনের ভুয়া খবর
Author: BD FactCheck Published: November 5, 2020, 11:41 pm | Updated: November 5, 2020, 11:42 pm
গত বুধবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনার আগে ও পরে নানান ধরনের ভুয়া খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস এই এসব ভুয়া তথ্যের তিনটি বিশেষ ধরণ চিহ্নিত করেছে। তাদের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে বিডি ফ্যাক্টচেকের পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
সামাজিক মাধ্যমে যে তিন ধরনের ভুয়া খবর বেশি ছড়িয়েছে সেগুলো হচ্ছে:
১. বিচ্ছিন্নভাবে ব্যালট বাক্স পাওয়া যাচ্ছে বা গায়েব হয়ে যাচ্ছে:
যখন ভোট গণনা চলছিল তখন বেশ কিছু অপ্রমাণিত দাবি ভাইরাল হয়ে যে, এখানে সেখানে ব্যালট বাক্স পাওয়া যাচ্ছে। আবার খবর ছড়িয়েছে, কোনো এক কেন্দ্রের ব্যালটবাক্স পাওয়া যাচ্ছেনা। ফেসবুক এবং টুইটারে ভুয়া ভোটের এসব ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হয়। যদিও সাথে সাথে মূলধারার মিডিয়া এবং ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এসব খবরের ভিত্তিহীনতা তুলে ধরেছে।
‘স্টানফোর্ড ইন্টারনেট অবজারভেটরি’ এর গবেষক রেনে ডিরেস্তা জানান, এসব পোস্ট “মূলত নির্বাচনের দিন নিজেরা তৈরি করে একটি ঘটনা হিসেবে দেখায়”। তারপর তারা দাবি করে “নির্বাচনে ভোটচুরি বা অবৈধ কাজ হচ্ছে”।
এ ধরণের পোস্টের সাথে কিছু ছবিও জুড়ে দেয়া হয় যাতে এই ভুয়া তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। যেমন ভোটের দিন সন্ধ্যায় দেখা গেল, একজন টুইটার ব্যবহারকারী এক খবরের নিচের কমেন্টে ভার্জিনিয়ার কোন একটি কাউন্টির নির্বাচন-কর্মীর হাতে ব্যালটবাক্সের একটি ছবি দিলেন। যার সাথে একটি ভুয়া দাবি যুক্ত করা হয় যে, যখন ভার্জিনিয়াতে রিপাবলিকানরা জিততে শুরু করেছিল তখন এসব ব্যালট পাওয়া গেল। টুইটার এই পোস্টটিকে অবশ্য বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
২. ‘সুইং স্টেট’গুলোতে ভোটের হিসাবে অস্বাভাবিকতা:
আরেক ধরণের ভুয়া খবর সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে যেগুলোতে দাবি করা হয়েছে, ‘সুইং স্টেট’গুলোতে রাতারাতি ভুয়া ভোট যুক্ত করা হচ্ছে। বিশেষ করে জো বাইডেনের দলের বিপক্ষে এসব ভুয়া ভোট যুক্ত করার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
বাস্তবে ভোটের হিসেবে স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে কোথাও কিছু হয়নি, বা অন্তত তেমন কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নির্বাচন-সম্পর্কিত ভুয়া তথ্য নিয়ে কাজ করা লিসা কাপলান জানান, “ভোট প্রদানের বহু আগে প্রদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ঠিক হয়ে থাকে”। “ভোটের হিসেবে যেই পরিবর্তন এসেছে সেগুলো যথাযথ নিয়ম মেনেই হয়েছে”।
এছাড়া মিস কাপলান আরো বলেন, “ভুয়া ভোটের অভিযোগ এলে জরুরি ভিত্তিতে তা দেখা উচিত, কিন্তু এমন অভিযোগ বাস্তবে তেমন নেই।”
এছাড়া কয়েকটি স্টেটে বাইডেনে পিছিয়ে থাকার পর আবার এগিয়ে যাওয়া এবং বিজয়ী হওয়ার বিষয়টির কারণ ভুয়া ভোট যুক্ত করার ঘটনা নয়। বরং বাইডেন সমর্থকরা যাতে আগে ইমেইলে ভোট দিয়ে দেন সেই আহ্বান ডেমোক্রেট দলের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছে। এতে সাড়া দিয়ে এই বছর অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ইমেইল ভোট পড়েছে। আর নির্বাচনের দিন যেসব ভোট পড়েছে স্বশরীরের, সেগুলো আগে গণনা হয়। এতে ট্রাম্পের ভোট সংখ্যা বেশি ছিলো। কিন্তু পরে যখন ইমেইলের ভোট গণনা শুরু হয় তখন বাইডেনের ভোট সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকে।
৩. মার্কার ব্যবহার করে ভোট তছরুপের অভিযোগ
একটি ভুয়া অভিযোগ ছড়ায় যে, এরিজোনা স্টেটে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোটারদের একধরনের মার্কার সরবরাহ করে যাতে করে ওই ভোটররা ব্যালটে দাগ দেন এবং এরপরে দাগ দেয়ার অভিযোগে ব্যালটটি বাতিল করা যায়। এই অভিযোগটি বুধ ও বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে বেশ চাউর হয় বলে দাবি মিডিয়া কোম্পানি জিগন্যাল ল্যাবস এর।
জিগনালের তথ্যানুযায়ী, নভেম্বর এর ৩ তারিখ সকাল থেকে পরের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত এই ভুয়া তথ্যটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হতে থাকে। এই পোস্টের পর অনেক ভোটদানকারী তাদের ভোট ঠিকঠাকভাবে ভোটিং মেশিনে গৃহীত হচ্ছে কীনা তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
পরে সেটি যাচাই করে দেখা যায়, ব্যাপারটি ভিত্তিহীন। ভোটকেন্দ্রে কোন কোনো মার্কার সরবরাহের ঘটনা ঘটেনি। যদিও উলটো জানা যায়, এই মার্কার বরং ভোটদানে আরো নিরাপদ। পরবর্তীতে ফেসবুক এই ভুয়া তথ্য-সম্বলিত হ্যাশট্যাগটি (#Sharpiegate) ব্যান করে দেয় যাতে সামাজিক মাধ্যমে আর দেখা না যায়।