
SearchBD নামক ‘সার্চ ইঞ্জিন’ বানানোর খবরটি কতটা ‘তাক লাগানো’ ঘটনা?
Author: BDFactCheck Admin Published: January 22, 2021, 2:55 pm | Updated: January 22, 2021, 11:56 pm
কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, SearchBD নামে নতুন একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আবির।
সময় টিভি এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম করেছে “সার্চ ইঞ্জিন বানিয়ে তাক লাগাল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী”।

আরও কিছু অনলাইন পোর্টালে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
সব সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টেই এটিকে ‘সার্চ ইঞ্জিন’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এটিকে আসলেই প্রকৃত অর্থে সার্চ ইঞ্জিন বলা যায় কিনা? এবং SearchBD.net এ ক্লিক করলে যে পেইজটি সামনে আসে সেটি কিভাবে নির্মিত সে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে www.bdfactcheck.com এর জন্য একটি নিবন্ধ লিখেছেন www.sciencebee.com.bd এর প্রতিষ্ঠাতা মবিন শিকদার। তার পাঠানো লেখাটি তার নিজস্ব বানানরীতিতে হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো–
//
আজকে হঠাৎ-ই ভাইরাল সিরাজগঞ্জের এক ছোটভাই সার্চ ইঞ্জিন বানিয়েছে। সেই সাথে নাকি তাকে ২ লাখ টাকা অনুদান ও দেওয়া হয়েছে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রাণালয় থেকে।
ঝামেলা সেটা না, এখানে যেভাবে মেইনস্ট্রিম নিউজপেপারে চটকদার ভাবে “সার্চ ইঞ্জিন বানিয়ে চমক লাগিয়ে দিয়েছে….” লেখা হচ্ছে, আসলে তেমন কিছুই ঘটেনি, কাউকে জানানোর মতোও তেমন কিছু ঘটেনি। তাও কেন হৈ-হুল্লোড়, এতো অনুদান?
একটু বোঝার চেষ্টা করুন, সার্চ ইঞ্জিনের মতো একটা ফ্রন্ট পেইজ বানাইলেই সার্চ ইঞ্জিন হয়ে যায় না। গুগলের এপিআই ব্যবহার করে এইরকম শত শত ওয়েবসাইট বানানো সম্ভব।

আপনি বলেন তো, তার এই ওয়েবসাইটে সার্চ করে যদি গুগলের রেজাল্টই পাওয়া যায় তাহলে তার কৃতিত্ব কই? সে কিভাবে লাভবান হবে?
তো, মনে খটকা লাগলো, আমাদের “Science Bee” লিখে সার্চ দিলাম দেখলাম গুগলে যেভাবে শো করে এখানেও সেভাবে আসে।
কাহিনি কী? আমি তো Science Bee এর ওয়েবসাইট (www.sciencebee.com.bd) তার সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করিনি। তাহলে এতো এতো রেজাল্ট কিভাবে আসছে? মজার বিষয় হচ্ছে, একটা রেজাল্টে ট্যাপ করে দেখি গুগলের লিংক করা এবং সেখান থেকে রিডাইরেক্ট হয়ে কাঙ্খিত ওয়েবসাইটে যাচ্ছে।
গুগলে সার্চ করুন গুগলের এপিআই দিয়ে কিভাবে আপনার নামে সার্চ পেইজ বানাবেন, অসংখ্য রেজাল্ট পাবেন। বুঝলাম না, দেশের মেইনস্ট্রিম নিউজপেপার, তথ্য মন্ত্রানলায় এটার মধ্যে কি পেলো?
সার্চ ইঞ্জিন শুধুমাত্র একটা পেইজ না, এটা একটা ডাটা সেন্টার,একটা কোম্পানি। যারা SEO, Index, Console, Adsense ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে তারা জানে গুগল কিভাবে কাজ করে, কিভাবে লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট সামনে নিয়ে আসে।
ধরুন, আপনি একটা ডোমেইন কিনলেন, ওয়েবসাইট বানালেন। সেই ওয়েবসাইট সাথে সাথে গুগলে পাবেন? না। সেই ওয়েবসাইটে যথাযথ কনটেন্ট দিয়ে Google Search Console এ যথাযথ নিয়ম মেনে ইনডেক্স করতে হয়, এরপর গুগল সেটা এপ্রুভ করে। এরপর গুগলে আপনি যে “কি-ওয়ার্ড” দিয়ে সার্চ করেন সেটার উপর ভিত্তি করে গুগল লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট যাচাই-বাছাই করে সামনে শো করে। “কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ দিয়ে কিভাবে, কোন ওয়েবসাইট সামনে আসে?” সেটি একটি বিস্তারিত আলোচনা, সেদিকে যাচ্ছি না।
একটু সহজ ভাবে বলি, আপনি যদি আপনার তথ্য বা ওয়েবসাইট এরকম ভুঁইফোড় ইঞ্জিনে ইনডেক্স না করেন কিন্তু রেজাল্টে ঠিকই তথ্য/ওয়েবসাইট দেখতে পারেন, তাহলে ধরে নিবেন সেটা গুগল থেকে ধারণকৃত। (কারণ ওয়েবসাইট মালিকরা সবার প্রথমেই গুগলেই ইনডেক্স করে)
তাহলে ছেলেটার সার্চ ইঞ্জিন কেন আবিস্কার নয়?
ইতোমধ্যে উপরে বলে ফেলেছি সে শুধু গুগলের API ব্যবহার করে HTML, CSS দিয়ে একটা ফ্রন্ট পেইজ তৈরি করেছে। বাকি সবকাজ গুগল ই করবে, গুগলই আপনাকে তথ্য সামনে এনে দিবে, গুগলই ইনকাম করবে। সে মাঝে গুগল এডসেন্স ইউজ করে কিছু এড শো করছে যেটাও গুগলের প্রোডাক্ট, এখান থেকেও ইনকামের সুযোগ সীমিত।
একটি সার্চ ইঞ্জিন বানানো বেশ কঠিন কাজ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। আমাদের দেশের একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন “পিপীলিকা”কে টিকিয়ে রাখতে ওইখানে সাস্ট এর অনেক স্টুডেন্ট ইন্টারনশিপ করে, কিভাবে বেটার এলগরিদম করা যায়। এটার জন্য পুরা একটা সেন্টার ,মিনি সুপার কম্পিউটার থাকার পরও পিপীলিকা তেমন এস্টাবলিশড সার্চ ইঞ্জিন না। বেশিরভাগ সময় ডাউন থাকে, কারন এত ডাটা,সার্ভার এর জন্য যে পরিমাণ খরচ লাগবে এটা এই দেশে এখনো কল্পনা করা যায় না। এজন্য শেষ ভরসা গুগল, বিং ই থাকে আমাদের।
আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো, জানানো উচিত কিন্তু কাকে জানাবো, কতটুকু জানাবো, কতখানি প্রাপ্য সেটা আমাদের বোঝা উচিত।
//